নয়া দিল্লিঃ আজ আমরা এমন এক ব্যক্তির কথা বলতে যাচ্ছি, যিনি ছোটবেলায় খুব খারাপ দিন দেখেছেন। পরিবার আর সমাজের থেকে সহায়তা না মেলার পরেও প্রাথমিক শিক্ষা নিয়েই সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং করেন তিনি। কড়া পরিশ্রমের পর ওনার কাছে যখন সুযোগ আসে, তখন ওনার কাছে পুঁজি হিসেবে মাত্র ৫০ টাকা ছিল।
ভারতের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী পি এন সি মেনন-র আজ কোনও পরিচয়ের দরকার নেই। মেনন যখন ১০ বছর বয়সের ছিলেন, তখন ওনার বাবা প্রয়াত হন। বাবার মৃত্যুর পর ওনার উপর সামাজিক আর আর্থিক চাপ এসে পড়ে। পড়াশোনার জন্য ওনার কাছে টাকা ছিল না। তবে তিনি হাল ছাড়েন নি। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে বি কম এর জন্য ত্রিশুরের একটি কলেজে ভর্তি হন তিনি।
সংসারের আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, কলেজের ফি দেওয়ারও টাকা ছিল না তাঁর। সবশেষে তিনি কলেজের পড়াশোনা ছেড়ে দেন। টাকা কামানো তখন বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে ওনার কাছে। সংসার চালাতে ছোটখাটো কাজ করা শুরু করে দেন তিনি।
কোনও ট্রেনিং ছাড়াই তিনি ছোটখাটো স্তরে ডিজাইনের কাজ করে। এরপর নিজের দক্ষতার বিকাশ ঘটিয়ে এবং একজন উচ্চমানের অভ্যন্তরীণ ডেকোরেটর এবং সিবিলের কাজ কাজ শুরু করেন। কড়া পরিশ্রম করেও সফলতা হাতে আসছিল না। তবে, তিনি হাল ছাড়েন নি।
দেশে সফলতা পাননি ঠিকই, কিন্তু বিদেশ থেকে তাঁকে কাজের হাতছানি দেয়। একহাতে টিকিট আর একহাতে ৫০ টাকা নিয়ে তিনি ওমানের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ওনার জন্য ওমান একটি সার্কাসের থেকে কম ছিল না। অজানা সংস্কৃতি, ভিন্ন ভাষা তাঁর পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। ওমানের তাপমাত্রা আর সেখানকার খাওয়াদাওয়া তাঁর জন্য চরম সমস্যার সৃষ্টি করছিল।
তবে মেনন সবকিছুকে হার মানিয়ে সেখানে মন দিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে জোর দেন। এরপর ওনার কাজ দেখে অনেকেই ওনার উপর প্রভাবিত হন এবং অনেকেই ওনার সঙ্গে চুক্তি করেন। এরপর ঋণ নিয়ে রাস্তার ধারে একটি ছোটখাটো ইন্টিরিয়র এবং ফিট-আউটের জন্য একটি দোকান খোলেন। সেখান থেকে ওনার কাজের সুবাদে ধীরে ধীরে তাঁর খ্যাতি বাড়তে থাকে।
আট বছর পর তিনি নিজের ব্যবসায় একটি বড় চুক্তি করেন। মেনন সময়ের মধ্যেই এবং উৎকৃষ্ট সামগ্রী দিয়ে কাজ করার খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। আর তিনি নিজের এই ব্যবসাকে নিজের স্ত্রীর নামে খুলেছিলেন। ব্যবসার নাম রেখেছিলেন শোভা লিমিটেড।
মেনন ওমানের অনেক বড়বড় হোটেল, বিলাসবহুল বাড়ি এবং সেখানকার রাজ পরিবারেও কাজ করেন তিনি। মেনন ইনফোসিসের জন্য বিশ্বের সবথেকে বড় ট্রেনিং সেন্টার ডিজাইন করেছিলেন। ২০১৬ সালে ফোর্বসের রিপোর্টে ওনার সম্পত্তি ১০ হাজার ৮০১ কোটি টাকা বলা হয়েছিল। নিজের পরিশ্রম এবং সুদক্ষতার কারণে বিদেশে ভারতের নাম উঁচু করেছেন মেনন। তবে উনি শুধু নিজের সাম্রাজ্যই খাড়া করেন নি। উনি অনেক সম্মানও কামিয়েছেন। ২০১৩ সালে তিনি নিজের অর্ধেক সম্পত্তি বিল গেটস-র চ্যারিটিতেও দান করেছিলেন।