ছোটবেলায় পিতৃবিয়োগ, সংসার চালাতে সাইকেলের দোকানে কাজ! বরুণ আজ IAS

ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসা, সেটাই পাশ করা কিন্তু মুখের কথা নয়। এই UPSC পরীক্ষাকে ভারতের সবথেকে কঠিনতম পরীক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রত্যেক বছর কয়েক লক্ষ মানুষ এই পরীক্ষায় বসেন বড় কিছু হওয়ার লক্ষ্যে। কিন্তু কৃতকার্য হতে পারেন হাতেগোনা কয়েকজন।

বড় সরকারি অফিসার হওয়ার ইচ্ছা কার না থাকে। কিন্তু সবসময় আর সব চাইলে তো পাওয়া যায় না। অনেকেরই সবসময় আর্থিক অবস্থা সঙ্গ দেয় না। আবার অনেকেই আছেন যারা হাজারো প্রতিকূলতাকে জয় করে নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকেন এবং সাফল্য লাভ করেন। আজ এই প্রতিবেদনে তেমনই একজন মানুষকে নিয়ে আলোচনা করা হবে যার কাহিনী শুনলে আপনারও চোখে জল আসতে বাধ্য। মহারাষ্ট্রের একটি ছোট্ট জায়গা বৈসারের বাসিন্দা বরুণ বারানওয়ালা খুব অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়ে এক কথায় সর্বশান্ত হয়ে যেতে বসেছিলেন। কিন্তু সেই যে কথায় আছে না, কিছু করে দেখানোর লক্ষ্য যদি স্থির থাকে তাহলে সবই সম্ভব জীবনে।

   

এই বরুণ বর্তমানে এক জন IAS অফিসার। কিন্তু এত বড় অফিসার হওয়ার রাস্তাটা তাঁর কিন্তু মোটেই সহজ ছিল না। বরুণ বারানওয়াল, একসময়ে সংসারের হাল ধরতে একটি সাইকেলের দোকানে কাজ করতেন। বরুণ একসময় স্কুলের পড়াশোনা ছেড়ে সাইকেলের দোকানে কাজ শুরু করেছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর গোটা পরিবার কার্যত ভেসে যেতে বসেছিল। এমন পরিস্থিতিতে ছোটবেলা থেকেই মেধাবী বরুণ দশম শ্রেণির পরীক্ষা দেওয়ার পর সংসারের দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিয়ে বাবার সাইকেল মেরামতের দোকান চালাতে শুরু করেন।

অর্থের অভাবে পড়াশোনা বন্ধ হয় বরুণের

দিনরাত বই পড়তেন সেইসঙ্গে সমান তালে দোকানে ও কাজ করতেন বরুণ। এরপর দশম শ্রেণীর ফলাফল আসার পর দেখা যায়, গোটা শহরে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন তিনি। কিন্তু অর্থের অভাবে আর পড়াশোনা করতে পারেননি। এমন পরিস্থিতিতে পড়াশোনায় বরুণের প্যাশন দেখে তাঁর পরিচিত এক চিকিৎসক তাঁকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দেন। এরপর আবার বরুণ পড়াশোনা শুরু করলেন।

সাইকেলের দোকান চালাতেন বরুণ

দ্বাদশ শ্রেণির পর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন বরুণ। তবে কলেজের ফি দিতেও বেশ অসুবিধা হচ্ছিল বরুণের। দিনের বেলায় কলেজে যেতেন। সন্ধ্যায় সাইকেলের দোকানে বসে তারপর টিউশনি পড়াতেন। বরুণের কঠোর পরিশ্রম ফলপ্রসূ হয়েছিল এবং তিনি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রথম সেমিস্টারে শীর্ষস্থান দখল করতে ছিলেন। এরপর তাকে কলেজ থেকে স্কলারশিপের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।

ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করতেই ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন বরুণ। পড়াশোনার জন্য আট বছর কঠোর পরিশ্রমের পর, বরুণ অবশেষে ইউপিএসসি পরীক্ষায় দেশের মধ্যে ৩২ তম স্থান অর্জন করেন। একসময় সাইকেলের পাংচার মেরামত করা বরুণ এখন কঠোর পরিশ্রমের জোরে আইএএস অফিসার হয়ে উঠেছেন।

বিগত ৭ বছর ধরে সাংবাদিকতার পেশার সঙ্গে যুক্ত। ডিজিটাল মিডিয়ায় সাবলীল। লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার নেশা।

সম্পর্কিত খবর