ভারতে প্রথম কোনও মহিলার নামে ট্রেন স্টেশন, রয়েছে এই বাংলাতেই! ইতিহাস গর্বিত করবে বাঙালিদের

বিভিন্ন মনীষীদের নিয়ে রেল স্টেশনের (Train Station) নাম তো আমরা হামেশাই দেখেছি। শুধু স্টেশন কেন, এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে রাস্তা, স্টেডিয়াম সবকিছুই মণীষীদের নামে নামাঙ্কিত হয়ে থাকে। তবে জেনে অবাক হবেন যে প্রথম কোনো মহিলা বিপ্লবীর নামে স্টেশনের নামকরণ হয়েছিলো আমাদের বাংলাতেই।
পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া-বর্ধমান কর্ড লাইনের এক গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন ‘বেলানগর’। ১৯৫৮ সালের ২৩ নভেম্বর এই স্টেশনটি উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন ভারতীয় রেলের উপমন্ত্রী শাহনওয়াজ খান (Shah Nawaz Khan)। এটিই ভারতের প্রথম স্টেশন, যার নামকরণ কোনো মহিলার নামে হয়েছিল। এখন প্রশ্ন আসতে পারে কোন মহিয়সী নারীর নামে এই স্টেশনটি? চলুন জেনে নিই সেই বীরাঙ্গনার পরিচয়।
তিনি আর কেউ নন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ভাইঝি বেলা মিত্র। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে লিপ্ত মহীয়সী নারীদের মধ্যে অন্যতম। সাধারণত প্রচারের আলোয় আস্তে বিশেষ পছন্দ করতেন না তিনি। সবসময় প্রচার থেকে দূরে গিয়েই লড়াই করেছেন। দেশের প্রতি তাঁর অবদানের জন্য ভারত সরকারের তরফ থেকে তাঁকে সম্মানিত করার জন্য এই তাঁর নামে এই স্টেশনের নামকরণ করা হয়েছে।
তবে একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং নেতাজী র ভাইঝি হওয়া ছাড়াও আরও একটি পরিচয় রয়েছে তাঁর। রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের মা হলেন বেলা মিত্র। তিনি জন্মেছিলেন ১৯২০ সালে, মাতুলালয়ে, ভাগলপুরে। সেই সময়কার ২৪ পরগনা জেলার কোদালিয়া নিবাসী হরিদাস মিত্রদের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর ১৯৩৮ সালে নিজ উদ্যোগে একটি মহিলা সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
তার ঠিক দুই বছর পরেই ১৯৪০ সালে কংগ্রেসের রামগড় অধিবেশন থেকে বেরিয়ে এসে নেতাজী যখন আপস-বিরোধী সম্মেলনের ডাক দেন, তখন নেতাজীর সাথে যোগ দেন তিনি। মাত্র ১৯ বছর বয়সে এই সম্মেলনের মহিলা শাখার কমান্ডারের দায়িত্ব দেওয়া হয় বেলাদেবীকে। তিনি এবং তাঁর স্বামী এখানকার সমস্ত বার্তা প্রেরণ করতেন সিঙ্গাপুরে।
এরপর ১৯৪৫ সালে হরিদাস সহ মোট ২২ জন বিপ্লবীকে বন্দি করে পুলিশ। বিচারে তাঁদের ফাঁসির সাজা ঘোষণা করা হয়। সেই সময় সকলের ফাঁসি আটকাতে গান্ধীজির শরণাপন্ন হন বেলাদবী। সমস্তকিছু বিচার করে গান্ধীজী পত্রালাপের মাধ্যমে বন্দীদের ফাঁসি রদ করে যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরে পরিবর্তন করতে সফল হয়েছিলেন। এছাড়াও বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশীদারিত্ব নিয়েছিলেন তিনি। বেলা মিত্র পর্দার আড়ালে থেকেই কাজ করে গেছেন আজীবন। অবশেষে ১৯৫২ সালের ৩১ জুলাই মাত্র ৩২ বছর বয়সেই মহাপ্রয়াণ ঘটে তাঁর।