কথিত আছে, আগুনে সোনা গরম করলেই তা কুন্দন হয়ে ওঠে। সফলতা রাতারাতি কারো হাতে আসে না, এর পিছনে লুকিয়ে থাকে কঠিন সংগ্রাম। এর একটি প্রত্যক্ষ উদাহরণ হল আভেশ খান (Avesh Khan)। ভারতীয় ক্রিকেট দলের একজন উদীয়মান তারকা। আজ তার ফ্যান ফলোয়িং, প্রতিপত্তি আমরা সকলেই দেখতে পাই। কিন্তু এই জায়গায় পৌঁছাতে তাকে যে কতটা পরিশ্রম করতে হয়েছে তা জানলে শিহরিত হবেন আপনিও।
ফাস্ট বোলিং দিয়ে তাবড় তাবড় ক্রিকেটারদের ঘাম ঝরানো আভেশ খান ভারতীয় ক্রিকেট দলে নাম লেখানোর জন্য বহু কাঠখড় পুড়িয়েছেন। প্রতিদিন ২৫-৩০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পৌঁছাতেন তিনি।
সাল ১৯৯৬, ১৩ ডিসেম্বর মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেন আবেশ। ১৪ এপ্রিল ২০১৭ সালের আইপিএল-এ বিরাট কোহলির নেতৃত্বাধীন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়ে আইপিএলে অভিষেক হয় তার। জানিয়ে রাখি ১০ বছর বয়স থেকে টেনিস বল দিয়ে ক্রিকেটে হাতেখড়ি হয় তার। একমাত্র তার কাকাই তার প্রতিভাকে চিনতে পেরে পেশাদার ক্রিকেটার হওয়ার পরামর্শ দেন তাকে।
এরপর ক্রিকেটার হিসেবে আভেশ খানের আত্মপ্রকাশ ঘটে ইন্দোরের কোল্টস ক্রিকেট ক্লাবে। এখানে তিনি অমরদীপ পাঠানিয়ার কোচিংয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছিলেন। এরপর অনূর্ধ্ব ১৬ বিজয় মার্চেন্ট ট্রফিতে চমকপ্রদ পারফরম্যান্স দিয়ে প্রমাণ করে দেন যে তিনি আসলেই যোগ্য।
কিন্তু এর মধ্যেই বিপদ নেমে আসে তার পরিবারে। যে দোকান থেকে তাদের সংসার খরচ চলতো সেই দোকানটিকেই খালি করতে হয়েছিলো তার বাবাকে। এরপর দোকান বন্ধ থাকায় সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে আভেশের কাঁধে। বুকে বল বেঁধে জীবনযুদ্ধে নেমে পড়ে সে। সেই সময় ম্যাচের উপার্জনের এক টাকাও নিজের জন্য মোটেও ব্যয় করতেন না তিনি। সমস্ত টাকা তুলে দিতেন পরিবারের হাতে।
১৭ বছর বয়সে, আভেশ মধ্যপ্রদেশ রঞ্জি ট্রফিতে খেলেন। মাত্র পাঁচ ম্যাচে ১৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। এরপর পরবর্তী অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের দলে নির্বাচিত হন তিনি। এতে, ১২ ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়ে রেকর্ড তৈরি করেন আভেশ। আইপিএল ২০১৭-এ, আভেশ খান রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি তিনি।
এরপর পরের মৌসুমের নিলামে তাকে কিনে নেয় দিল্লি। দিল্লির হয়ে খেলার সময় নিজের দূর্দান্ত পারফরম্যান্সে আভেশ বুঝিয়ে দেন যে তিনি আসলেই রাজা। দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে খেলতে গিয়ে ৮ ম্যাচে ১৪ উইকেট নিয়েছিলেন আভেশ। আভেশ তার পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং আবেগ দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন যে একজন ব্যক্তি যদি সত্যিই জীবনে কিছু করতে চায় তবে তিনি অবশ্যই সাফল্য পাবেন।