ছত্তিশগড়ের রীতেশ গোবর দিয়েই বানিয়ে দিচ্ছেন ব্যাগ, চপ্পল, আর বছরে আয় করছেন প্রায় ৩৬ লক্ষ টাকা

আপনি যদি কখনো গ্রামে গিয়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই বাড়ির বাগানে বা কোনো এক কোণে গোবরের স্তূপ দেখেছেন। কোথাও গোবর থেকে তৈরি হয় ঘুঁটে আবার কোথাও সেই গোবর থেকে সার তৈরি করে ফেলা হয় মাঠে। শহরের রাস্তার পাশে গোবরের স্তূপও দেখেছেন নিশ্চয়ই। কেউ কেউ গোবর থেকে ইট, সিমেন্ট ইত্যাদি তৈরি করে কৃষকদের পথচলা সহজ করে দিয়েছেন। আর তেমনই একজন হলেন ছত্তিশগড়ের রিতেশ আগরওয়াল।
ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরের গোকুল নগরে বসবাসকারী এক গরু চাষী গোবর থেকে কয়েক ডজন জিনিস তৈরি করেছেন। বর্তমানে এই গোবর নিয়ে কাজ করেই তার বার্ষিক টার্নওভার দাঁড়িয়েছে ৩৬ লক্ষ টাকা (indian Rupee)! গত তিন বছরে রীতেশ আগরওয়াল গোবর থেকে ব্যাগ, পার্স, প্রতিমা, প্রদীপ, ইট, রং, আবির-গুলাল এমনকি চপ্পলও তৈরি করেছেন তিনি। ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল যখন ২০২২ সালের বাজেট অধিবেশন পেশ করতে বিধানসভায় পৌঁছেছিলেন, তখন তাঁর হাতে ছিল রীতেশের গোবরের তৈরি একটি ব্যাগ। দশদিনের কঠোর পরিশ্রমের পর এই ব্যাগটি তৈরি করেছিলেন রিতেশ ও তার সংস্থা ‘এক পাহাড়’।
রিতেশ শিক্ষা গ্রহণ করেন রায়পুর থেকেই। ২০০৩ সালে স্নাতকের ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। অনেক কোম্পানিতে চাকরি করলেও তার মন টিকছিল না কোথাও। কথোপকথনে রিতেশ জানান, বহুদিন ধরে তিনি সমাজের জন্য কিছু করতে চেয়েছিলেন কিন্তু বুঝতে পারেননি কি করা উচিৎ তার। এক সাক্ষাৎকারে রিতেশ বলেন, “প্রায়ই রাস্তায় গরু ঘুরে বেড়াতে দেখতাম। এসব গরুর অধিকাংশ আবর্জনা খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে, অনেকে দুর্ঘটনারও শিকার হয়। আমি তাদের জন্য কিছু করতে চেয়েছিলাম। ২০১৫ সালে চাকরি ছাড়ার পর আমি একটি গোয়ালে যোগ দিয়ে গরুর সেবা শুরু করি।”
রীতেশ জানান, গোবর থেকে চপ্পল তৈরির প্রক্রিয়া খুবই সহজ। এজন্য রীতেশ গোহরের আঠা, আয়ুর্বেদিক ভেষজ, চুন এবং গোবরের গুঁড়ো মিশিয়ে তৈরি করেন এই চপ্পল। এবং ১ কেজি গোবর থেকে ১০ টি স্লিপার তৈরি করা সম্ভব। এবং এই চপ্পল ৩-৪ ঘণ্টা বৃষ্টিতে ভিজে গেলেও নষ্ট হয় না। রোদে শুকিয়ে আবারো ব্যবহার করা যায়।
গোবর থেকে আবির ও গুলাল তৈরি করেন তিনি। এজন্য প্রথমে গোবর শুকনো করতে হয়। এরপর গোবর পাউডারে পরিণত করে তাতে ফুলের শুকনো পাতার গুঁড়া মেশানো হয়। এরপর এতে কাস্টার্ড পাউডার মেশানো হয়। পাউডারে বিভিন্ন রং দিতে প্রাকৃতিক রংও ব্যবহার করা হয়। হলুদ রঙের জন্য হলুদ ব্যবহার করা হয়, ধনে পাতা সবুজ রঙের জন্য ব্যবহার করা হয়।
গোবর থেকে জিনিস বানানো শেখার পর রিতেশ স্থানীয় লোকজনকেও এই কাজের সঙ্গে যুক্ত করেন। এবং অন্যদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন।বর্তমানে শুধু ছত্তিশগড় থেকে নয়, আশেপাশের রাজ্য থেকেও তাদের কাছে গোবরের পণ্যের চাহিদা আসতে শুরু করেছে ।