‘ওপারে ভালো থাকিস”! চোখের জলে লিপস্টিক, চন্দন দিয়ে ছোটবোনকে শেষবারের মতো সাজালেন দিদি

ঐন্দ্রিলা শর্মা পরপারে পাড়ি দিয়েছেন। লক্ষ ভক্তের হৃদয়কে কাঁদিয়ে অবশেষে দিকপারে পাড়ি দিলেন অভিনেত্রী। সদ্য প্রস্ফুটিত ফুলের মতোই মিষ্টি ছিল তার হাসি, রূপ ছিল রজনীগন্ধার মতোই স্নিগ্ধ। আর আজ সেসবই মলিন, যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন ‘ফাইটার’ ঐন্দ্রিলা। একের পর এক রোগের মারণ কামড়ের কাছে হেরে গেলেন জীবনের শেষ যুদ্ধে।
টানা ২০ দিন যোদ্ধার মতো লড়েছেন তিনি। অবশেষে আজ বিদায়ের অবসর। চির বিদায়। যেতে দিতে মন নাহি চায়, কিন্তু যেতে তো হবেই। আর সেই বিচ্ছেদের বিরহে পরিবার তো বটেই, অগুনতি মানুষের হৃদয়ও কাঁদতে বাধ্য হয়েছে। সেই সদা হাস্যময়ী, লাবন্যময়ী, প্রাণোচ্ছল ঐন্দ্রিলাকে আর দেখা যাবেনা।
পরিবারের সবার ছোট তিনি। অথচ সবার আগে বিদায় নিচ্ছেন তিনি। একটা সময় পুরো পরিবার জুড়ে দাপিয়ে বেড়াতেন তিনি। আর আজ সেই সমস্ত দাপট স্থির হয়ে গিয়েছে। জীবনের শেষ শয্যায় শুয়ে রয়েছেন তিনি। সেখানেই বোনকে ইচ্ছেমত সাজিয়েছেন তার দিদি। বোনের কপালে পরিয়ে দিয়েছেন চন্দনের ফোঁটা, কিন্তু কোথায় ফোঁটা! সেতো চোখের জলের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছে।
সাধ করে শেষ যাত্রার আগে ঠোঁটে লিপস্টিক, গালে ফাউন্ডেশন, ব্লাশ অন করে ফুলের সাজে সাজিয়েছেন নিজের বোনকে। কিন্তু চোখের জল যেন বাঁধ মানার নয়। সদাহাস্য, উজ্জ্বল এক মেয়ে এভাবে এত জলদি দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবে, সেটা বোধহয় দুঃস্বপ্নেও কেও কল্পনা করতে পারেনি। ঐন্দ্রিলাকে অবশ্য কম আঘাত সহ্য করতে হয়নি, কর্কট রোগ মারণ আঘাত হানে। তাও দু দুবার।
কিন্তু দুবারই রোগকে হেলায় হারিয়ে ফিরে আসেন ‘ফাইটার’ রূপে। শেষযুদ্ধটা অবশ্য আর পারলেন না তিনি। শক্তি ফুরিয়ে এসেছিল যে। রবিবার বেলা ১২:৫৯ এ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ঐন্দ্রিলা। খবর পেয়ে হাসপাতাল চত্বরে ভিড় উপচে পড়েছে। প্রিয় অভিনেত্রীকে শেষ দেখার ইচ্ছায় ভিড় জমান অনুরাগীর দল।
অভিনেত্রীর মরদেহ প্রথমে যায় কলকাতার কুদঘাটের আবাসনে। এরপর সেখান থেকে টেকনিশিয়ান স্টুডিয়োতে। সবার শেষে ক্যাওড়াতলা মহা শ্মশানে।
এই মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারছেন না। মাত্র ২৪ বছর বয়স ছিল ঐন্দ্রিলা শর্মার। সদ্য প্রস্ফুটিত ফুলের ন্যায় যৌবনরসে ভরপুর ছিলেন তিনি। করার অনেক কিছুই ছিল, দেখার অনেক বাকি ছিল। কিন্তু মৃত্যু সেইসব থেকে দূরে নিয়ে চলে গেল তাকে। একের পর এক কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট সহ শারীরিক সমস্যার সামনে ন্যুব্জ হয়ে পড়েন তিনি। এই গল্প প্রেম, ভালোবাসা, রূপকথার। এই গল্প এক তরুণীর যে মাত্র ১৭ বছর বয়স থেকেই লড়াই করতে পেরেছিল। ওপারের দুনিয়ায় ভালো থাকুন ঐন্দ্রিলা শর্মা।