মুড়ি বিক্রি করে IIT-তে ১১৭ নম্বর! বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকের ছেলের সাফল্য অনুপ্রেরণা জোগাবে

কোনো কিছু করার নেশা থাকলে কোনো অসুবিধাই পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন অনেক পরিশ্রম ও অপরিসীম ধৈর্য। আর তার জলজ্যান্ত উদাহরণ হলেন শীতলকুচির আকাশ আলম। খুব অল্প বয়স থেকেই সংগ্রাম কাকে বলে তা বুঝে গিয়েছিলেন আকাশ।

উচ্চ শিক্ষিত হয়েও সংসারের হাল ধরতে মুড়ি বিক্রি করেন আকাশ। তাঁর কাহিনী শুনলে চমকে উঠতে পারেন আপনিও। ২০২২ সালে কোচবিহারের আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল কলেজ থেকে গণিতে বিএসসি পাশ করেন শীতলকুচির বাসিন্দা আকাশ আলম। কিন্তু আচমকাই যেন সংসারের সব দায় দায়িত্ব তাঁর কাঁধে এসে পড়ে। কলেজ পাশ করে IIT পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন। তবে সেটাও কিন্তু সহজ ছিল না। বাবা ভিনরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কর্মরত। বাড়িতে মা একা। এক বোনের বিয়ে হয়েছে। ফলে সংসারের খরচ চালাতে পড়াশোনা সেইসঙ্গে মুড়ির দোকান চালাতে শুরু করেন আকাশ।

   

তবে যখন দোকানে বেশি ভিড় থাকত না তখন পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি নিতে থাকেন আকাশ। বই পড়তেন। আর সেই কষ্টের সাফল্যও মেলে। হাজারো প্রতিকূল পরিস্থিতি থাকলেও হার না মেনে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনলজি জয়েন্ট এডমিশন টেস্ট ফর মাস্টার্সে নজরকাড়া ফল করে ফেললেন লালবাজার গ্রাম পঞ্চায়েতের আমতলার আকাশ আলম। তাঁর সাফল্যে বেজায় খুশি জেলাবাসীও।

আকাশ বিদ্যাসাগর শিশুনিকেতন থেকে পড়াশোনা শুরু করেন। এরপর বড় মরিচা দেলোয়ার হোসেন উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ। পরে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে মাথাভাঙ্গা বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি। সেখান থেকে উচ্চমাধ্যমিকে সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে এবিএন শীল কলেজ থেকে ৮৯.৬৭ শতাংশ নম্বর নিয়ে ২০২২ সালে অঙ্কে বিএসসি পাশ।

জানা যায়, গত ২২ মার্চ সর্বভারতীয় স্তরের এই পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা হয়। সেখানে দেখা যায়, সারাদেশে আকাশের র‍্যাংক ১১৭। খুশি আকাশের পরিবারও। নিজের সাফল্যের বিষয়ে আকাশ জানান, ‘নিজের পড়াশোনা চালানোর খরচ নিজেকে জোগাড় করতে হয়। এখন বাইরে গিয়ে কীভাবে তা সম্ভব, বুঝে উঠতে পারছি না।’

বিগত ৭ বছর ধরে সাংবাদিকতার পেশার সঙ্গে যুক্ত। ডিজিটাল মিডিয়ায় সাবলীল। লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার নেশা।

সম্পর্কিত খবর