২০০৬-এ দেন প্রস্তাব! চিনে নিন ISRO-র কৃষ্ণগহ্বর মিশনের মাথা উত্তরবঙ্গের বাঙালি বিজ্ঞানীকে

নয়া বছরে সকলকে চমকে দিয়েছে ইসরো (Indian Space Research Organisation)। মহাকাশে (Space) ব্ল্যাকহোলের রহস্যের ওপর থেকে পর্দা তুলতে মিশন এক্সপোস্যাট মিশন চালু করেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি। স্বাভাবিকভাবেই এই মিশন নিয়ে ভারতবাসীর গর্বের শেষ নেই। ISRO ১ জানুয়ারি সকাল ৯.১০ মিনিটে এক্স-রে পোলারিমিটার স্যাটেলাইট (Xposat Mission) মিশনটি উৎক্ষেপণ করে।

২০২৩ সালে চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan-3) মিশনের মাধ্যমে চাঁদে পৌঁছানোর পর এবং আদিত্য এল-১ (Aditya-L1) মিশনের মাধ্যমে সূর্যের দিকে যাত্রা করার পর এ বছরই মহাকাশ ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছে ইসরো। ইসরো জানিয়েছে, বছরের প্রথম মিশনটি অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। মহাকাশে ব্ল্যাক হোল এবং নিউট্রন নক্ষত্র অধ্যয়নের জন্য একটি বিশেষ জ্যোতির্বিজ্ঞান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র প্রেরণকারী বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ হয়ে উঠেছে ভারত।

   

এক্সপোস্যাট গবেষণার জন্য একটি মানমন্দির, যা মহাকাশ থেকে ব্ল্যাক হোল এবং নিউট্রন নক্ষত্র সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ করবে। তবে আপনি কি জানেন যে এই মিশনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন একজন বাঙালি বিজ্ঞানী? যাকে ছাড়া এই মিশনটি একপ্রকার অসম্ভব ছিল সেটা জানেন কি? আজ এই প্রতিবেদনে সেই বিজ্ঞানীকে নিয়েই আলোচনা হবে।

এই এক্সপোস্যাট মিশনের সঙ্গে যে বাঙালি বিজ্ঞানী ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছেন তাঁর নাম হল বিশ্বজিৎ পাল (Biswajit Paul)।  তিনি বেঙ্গালুরুর ‘রামন রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর (Raman Research Institute, Bengaluru) জ্যোতির্বিজ্ঞানী হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। তিনি বর্তমানে বেঙ্গালুরু নিবাসী। বর্তমানে তিনি বাঙালিদের অন্যতম গর্বের মানুষ হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এই বাঙালি বিজ্ঞানী জানান, কসমিক এক্স-রে’র পোলারাইজেশন নিয়ে গবেষণায় সাহায্য করবে এই অভিযান।

biswajit xposat

উত্তরবঙ্গের (North bengal) ইসলামপুরের (Islampur) বাসিন্দা তিনি। ছোট থেকে বড় কিছু করে দেখানোর স্বপ্ন ছিল তাঁর। রায়গঞ্জ কলেজ থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর বিশ্বভারতী থেকে  পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ থেকে বিশ্বজিৎ phD করেন। তার পরে রামন রিসার্চ ইনস্টিটিউটে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এখনও সেখানেই আছেন বিশ্বজিৎ।

এই এক্সপোস্যাট স্যাটেলাইটে দুটি পেলোড রয়েছে। প্রথম – POLIX এবং দ্বিতীয়টি হল XSPECT। পলিক্স এই স্যাটেলাইটের প্রধান পেলোড। এটি রমন রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং ইউআর রাও স্যাটেলাইট সেন্টার যৌথভাবে তৈরি করেছে। ১২৬ কেজি ওজনের এই যন্ত্রটি মহাকাশের উৎসের চৌম্বকীয় ক্ষেত্র, বিকিরণ, ইলেকট্রন ইত্যাদি অধ্যয়ন করবে। এটি 8-30 keV রেঞ্জের শক্তি ব্যান্ড অধ্যয়ন করবে। পলিক্স মহাকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল ৫০টি বস্তুর মধ্যে ৪০টি নিয়ে গবেষণা করবে।

আপনি জানলে চমকে উঠবেন, পোলিক্সের মতো পেলোড মহাকাশে পাঠিয়ে যে এই ধরনের গবেষণা চালানো যায়, সেই প্রস্তাব নাকি ২০০৬ সালেই দিয়েছিলেন বিশ্বজিৎ। সেই প্রস্তাবের ১০ বছর পর, ২০১৬ সালে মেলে অনুমোদন। এই প্রসঙ্গে বিজ্ঞানী বিশ্বজিৎবাবু জানান, পোলিক্সের অনুমোদন পাওয়ার পর ২০১৭ সালে পেলোড তৈরির কাজ শুরু হয়। ২০২১ সালের মধ্যে এই পেলোড মহাকাশে পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল। তবে কোভিডের জন্য কাজ অনেকটা পিছিয়ে গিয়েছিল । পোলিক্স পেলোডটি এক্স-রে ও তার পোলারাইজ়েশন ব্যবহার করে নিকটবর্তী কৃষ্ণগহ্বর ও নিউট্রন স্টার থেকে ধেয়ে আসা বিকিরণ খুঁজে বার করবে ও গবেষণা চালাবে।

বিগত ৭ বছর ধরে সাংবাদিকতার পেশার সঙ্গে যুক্ত। ডিজিটাল মিডিয়ায় সাবলীল। লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার নেশা।

সম্পর্কিত খবর