মুখ ফিরিয়েছে মা-মেয়ে! বীরভূমের BJP প্রার্থী দেবাশিস ধরের কাহিনী চোখে জল এনে দেবে

চলতি মাসেই লোকসভা ভোটের প্রথম দফা ভোটগ্রহণ হবে। এদিকে আসন্ন এই ভোটকে পাখির চোখ করে জোরকদমে রাজনৈতিক প্রচার চালাতে ব্যস্ত দলগুলি। নাম ঘোষণা হচ্ছে একের পর এক প্রার্থীর। এদিকে প্রার্থী তালিকাতে চমক দিচ্ছে দলগুলি। কিন্তু এবারে অনুব্রত গড় বীরভূমে বিজেপির প্রার্থী তালিকায় রয়েছে বিরাট চমক। এই আসনে এবারে প্রার্থী করা হয়েছে প্রাক্তন IPS অফিসার দেবাশিস ধরকে।

গত ২০ মার্চ ‘ব্যক্তিগত কারণ’ ও ‘সামাজিক লক্ষ্য’-এর কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন দেবাশিস ধর। তিনি বীরভূম আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। যদিও এই দেবাশিস ধরের জীবনের কিছু গল্প জানলে অবাক হবেন আপনিও। সম্প্রতি তিনি জানান, ‘আমি মানুষের জন্য কিছু করতে চেয়েছিলাম, তাই আইপিএস অফিসার হয়েছিলাম। ২০২১ সালের পর কাজ করতে না পেরে অপমানিত হয়েছি। আমার বাড়িতেও তল্লাশি চালায় পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। আমার মা, যিনি কখনও এমন জিনিস দেখেননি, আমাকে সেইসময়ে মা বলেছিলেন তিনি আর আমার মুখ দেখতে চান না।’

   

দেবাশিস ধর জানিয়েছেন, জীবনে তাঁর অনেক বড় ক্ষত রয়েছে। এমনকি বিগত দু’বছর ধরে নিজের মেয়ের মুখ অবধি দেখতে পারেননি দেবাশিস ধর। কোচবিহারের প্রাক্তন পুলিশ সুপার দেবাশিস ধরকে ২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের পরে বরখাস্ত করা হয়েছিল, যখন শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কথিত গুলিতে চারজন নিহত হয়েছিল। বিজেপি অবশ্য সেইসময়ে বলেছিল, দেবাশিস ধরকে সাসপেন্ড করা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছিল তৃণমূলের। এর কারণ দেবাশিস ধর গুলি চালানোর ঘটনার ‘আসল রিপোর্ট’ পেশ করেছেন।

শুধু তাই নয়, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির মামলায় তাঁর বাড়িতে হানা দেয় পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি। সেই সময় সল্টলেকে দেবাশিস ধর ও ব্যবসায়ী সুদীপ্ত রায়চৌধুরীর বাড়ি, মেট্রোপলিটন সোসাইটি ও যোধপুর পার্কে তল্লাশি চালানো হয়। সিআইডি জানায়, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ধরের সম্পত্তি অস্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পেয়েছিল। দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘আমার কন্যা আগে থেকেই ওর মায়ের সঙ্গে থাকত। আদালতের নির্দেশে সপ্তাহে এক দিন দেখা করতাম। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে যখন একের পর এক মামলা, হেনস্থা তখন মেয়েই আমাকে ওর কাছে যেতে বারণ করে দেয়।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘সেই থেকে আড়াই বছর বুকে পাথর চেপে অপেক্ষায় আছি। মেয়ের মুখটাও দেখা হয়নি। ও তো এ বার পনেরোয় পা রাখল।’’ এদিকে চাকরিতে পদোন্নতি না পেয়ে তিনি অন্যত্র চলে যেতে চেয়েছিলেন। যে কারণে দেবাশিস ধর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে যোগাযোগ করেন। সেই সূত্রেই তাঁর বিজেপি শীর্ষনেতৃত্বের সঙ্গে কথা, আলোচনা, অনলাইনে গেরুয়া শিবিরে যোগ এবং শেষপর্যন্ত বীরভূমে প্রার্থী। এই প্রসঙ্গে দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘আমি যদি সাংসদ হতে পারি, যদি কোনও বড় পদ পাই, তা হলে হয়তো আবার সব কিছু আগের মতো হতে পারে। আমি নিজেকে প্রমাণ করতে পারলে মেয়ে হয়তো আমার সামনে আসতে রাজি হবে। ‘বাবা’ বলে ডাকবে। আমিও মায়ের কাছে গিয়ে বসতে পারব সেই আগের মতো।’’

বিগত ৭ বছর ধরে সাংবাদিকতার পেশার সঙ্গে যুক্ত। ডিজিটাল মিডিয়ায় সাবলীল। লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার নেশা।

সম্পর্কিত খবর