ছবি তুলে চালাতেন পড়াশোনা, আজ ৬৫০০ কোটির মালিক! কাঁদিয়ে দেবে নরেন্দ্রর সাফল্যের কাহিনী

মনে জিদ ও কিছু করে দেখানোর অদম্য সাহস, মানুষকে যে কোনও পর্যায়ে নিয়ে চলে যেতে পারে। আর এই কথাটি বারবার প্রমাণিত করেছেন বহু মানুষ। বহু মানুষ এমন রয়েছেন যারা জীবনে একটুতেই ভেঙে পড়েন, তবে এমন মানুষও অনেক রয়েছেন যারা হাজারো প্রতিকূলতার মধ্যে নিজের মনোবলকে ভাঙতে দেন না।

আজ এই প্রতিবেদনে তেমনই একজন মানুষকে নিয়ে কথা হবে। যার কাহিনী শুনলে আপনারও চোখে জল চলে আসতে পারে। আজ আমরা আপনাকে এমন একজন ব্যক্তির কথা বলতে চলেছি যিনি জীবনে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হয়ে দুর্দান্ত সাফল্য অর্জন করেছেন। এই ব্যক্তি হলেন নরেন্দ্র বনসল (Narendra Bansal), যিনি কিনা Intex কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা।

   

ইনটেক্স টেকনোলজিস (Intex Technologies) ভারতের (India) শীর্ষ মোবাইল (Mobile Phone) এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইস নির্মাতাদের মধ্যে একটি। নরেন্দ্র বনসল ছোটবেলা থেকেই অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন, কিন্তু তাঁর সমস্ত ঝামেলাকে সুযোগে পরিণত করে তিনি সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে থাকেন। আর আজ তিনি কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক। নরেন্দ্র বনসলের বাবা ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। নরেন্দ্র ১৯৬৩ সালে রাজস্থানের হনুমানগড়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা গ্রামেই হয়েছিল। এরপর তার পরিবার নেপালে চলে যায়।

নরেন্দ্র নেপালে দশম পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ১৯৮০ সালে গোটা পরিবার দিল্লিতে চলে আসে। এর পরে, নরেন্দ্র দিল্লিতেই তাঁর দ্বাদশ শিক্ষা শেষ করেন। আপনি জানলে অবাক হবেন, এই নরেন্দ্র বনসলই এক সময়ে দিল্লির লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দিরে মানুষের ছবি তুলতেন। সেই ছবিগুলো চাবির আংটিতে পেস্ট করে বিক্রি করতেন তিনি। এই উপার্জন দিয়ে তিনি তার পড়াশোনার খরচ বহন করতেন। এরপর তিনি ক্যাসেট বিক্রি শুরু করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি অডিও-ভিডিও ক্যাসেট বিক্রি করতেন।

narendra bansal

নরেন্দ্র বনসল সবসময় বাবার মতোই একজন মস্ত বড় ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্ন বুনেছিলেন। আর এই ইচ্ছা নিয়েই তিনি দিল্লির চাঁদনী চকের নয়া বাজারে কর্ডলেস ফোনের ব্যবসা শুরু করেন। এ কাজে ভালো কোনো লাভ হয়নি। তার এই কাজ খুব দ্রুত বন্ধও হয়ে যায়। এরপর ১৯৯২ সালে নরেন্দ্র বনসল তাঁর ভাইদের নিয়ে দিল্লির বিখ্যাত নেহরু প্লেসে একটি ভাড়া দোকান নিয়ে কম্পিউটার অ্যাসেম্বলির কাজ শুরু করেন।

নরেন্দ্র তাইওয়ান এবং হংকং থেকে সস্তা পণ্য এনে এখানে একত্রিত করে বিক্রি করতেন। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় না তাঁকে। ধীরে ধীরে ব্যবসা বাড়তে থাকে বনসলের। ১৯৯৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইমপেক্স কোম্পানি শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি আইটি পেরিফেরাল কোম্পানি ইনটেক্স টেকনোলজিস প্রতিষ্ঠা করেন। এর জন্য তিনি চিন ও কোরিয়া থেকে পণ্য অর্ডার করতেন, যার কারণে তাদের পণ্য তাদের প্রতিযোগীদের চেয়ে সস্তা ছিল। ইনটেক্স প্রথম বছরেই ৩০ লক্ষেরও বেশি মুনাফা অর্জন করে ফেলে।

পরে তিনি স্পিকার, হোম থিয়েটার এবং ডিভিডি প্লেয়ারের কাজও শুরু করেছিলেন। এরপর ১৯৯৭ সালে Intex তার হোম থিয়েটার নিয়ে আসে, যা সেই সময়ে মানুষ খুব পছন্দ করেছিলেন। এরপর ২০০৫ সালে, সংস্থাটি তার উৎপাদন ইউনিট শুরু করে। ২০০৭ সালে বাজারের হাওয়া বুঝে সস্তা ও ভালো মোবাইল ফোন চালু করা হয়। তাদের মোবাইল বাজারের অন্যান্য সব কোম্পানির তুলনায় সস্তা হওয়ায় তারা মানুষের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন খুব কম সময়ের মধ্যে। সবথেকে বড় কথা, নরেন্দ্র বনসলের কঠোর পরিশ্রম এবং দৃষ্টিভঙ্গির কারণে, ইনটেক্স আজ ৬৫০০ কোটি টাকার সংস্থায় পরিণত হয়েছে।

বিগত ৭ বছর ধরে সাংবাদিকতার পেশার সঙ্গে যুক্ত। ডিজিটাল মিডিয়ায় সাবলীল। লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার নেশা।

সম্পর্কিত খবর