ছিল না ফোন কেনার টাকা! আজ ২০০ কোটির কোম্পানি, এক আইডিয়ায় বদলে দেয় দুই বন্ধুর জীবন

ব্যবসা করা মুখের কথা নয়। টাকা বিনিয়োগ করা, তারপর একটি ব্যবসাকে একটা ভালো জায়গায় দাঁড় করাতে গিয়ে কমবেশি হিমশিম খেতে হয় সকলকেই। কারোর ভাগ্য যদি ভালো হয় তাহলে খুব দ্রুত সাফল্য মেলে, আবার কপাল যদি খুব খারাপ হয় তাহলে তো কোনও কথাই নেই। তারপর বছরের পর বছর ধরে ব্যবসা টিকবে কিনা সেটার একটা আলাদা ঝুঁকি তো থাকেই। কিন্তু আপনি জানলে অবাক হবেন, একটা আইডিয়া যা দুজন বন্ধুর জীবনের রূপরেখাই বদলে দিয়েছে। মাত্র কিছু টাকা বিনিয়োগ করে দুজন বন্ধু এখন প্রতি বছর ২০০ কোটি টাকা উপার্জন করেন।

হ্যাঁ শুনতে অবাক লাগলেও এটাই দিনের আলোর মতো সত্যি। একটা ভালো ফোন কিনতে কে না চান। iPhone-র কথাই ধরা যাক না। কিন্তু এই ফোন কেনা সকলের সাধ্যের মধ্যে থাকে না। কারণ এর দাম অনেকটাই বেশি। তেমনই আজ থেকে বেশ কিছু বছর আগে দিল্লির দুই বন্ধু Apple-এর একটি ফোন কিনতে দোকানে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ফোনের দাম তাদের বাজেটে কুলোচ্ছিল না। ফলে না কিনেই ফিরে আসছিলেন। তবে সেদিন সেই স্টোরের একজন কর্মচারী ওই দুজন বন্ধুকে ডাকেন এবং বলেন যে তারা যদি সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন নেন তবে এটি অনেক সস্তা হবে। সমস্যা ছিল একটাই, এই সেকেন্ড হ্যান্ড ফোনে কোনও ওয়ারেন্টি ছিল না। এরপর ওই দুই বন্ধু ভাবলেন কেন ঝুঁকি নেবেন। সেইদিন তাঁরা ফোন না কিনেই বাড়ি ফেরেন, কিন্তু সেদিন ওই স্টোরেই দুজন বন্ধুর ব্যবসার প্রথম ভিত তৈরি হয়ে গিয়েছিল।

   

আজ কথা হচ্ছে, অবনিত সিং এবং সাকেত সৌরভকে নিয়ে। তাঁরা সেকেন্ড হ্যান্ড ফোনের ব্যবসা করে আজ বছরে ২০০ কোটি টাকারও বেশি টার্নওভার করেন। তবে দুজন বন্ধুর কোম্পানির সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন বিক্রি করার পদ্ধতিটা খানিক আলাদা। সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন বিক্রি করেও যে একটা দমদার ব্যবসা খাড়া করা যায় তা এই দুজন বন্ধু মিলিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। তবে এত বড় কোম্পানি দাঁড় করানো সহজ ছিল না। কোম্পানি শুরু করার আগে, অবনীত এবং সাকেত কয়েক মাস ধরে এই প্রকল্পের জন্য বাজারের অবস্থা নিয়ে একটু গবেষণা করেছিলেন। যে কোনও ব্যবসা দাঁড় করাতে একটু ভালো পুঁজির দরকার হয়। এই দুজনেরও সেটাই দরকার ছিল। ফলে যেমন ভাবা তেমন কাজ। অবনীত এবং সাকেত তাদের সমস্ত সেভিংস লাগিয়ে দেন ব্যবসার ওপর। দুজনেই আলাদা আলাদা ব্যাঙ্ক থেকে ১৫-১৫ লক্ষ টাকা ব্যক্তিগত ঋণ নিয়েছিলেন। এরপর ২০১৭ সালের মে মাসে প্রায় ৫৫ লক্ষ টাকা খরচ করে সংস্থাটি শুরু করেন দু’জনে। প্রাথমিকভাবে, অবনীত এবং সাকেত তাদের গাড়িতে প্রায় ১০০ টি ফোন বহন করে দোকানদারদের কাছে যেতেন এবং সেগুলি বিক্রি করতেন।

যদিও দুজনের স্ট্র্যাটেজি একটু আলাদা ছিল। প্রাথমিকভাবে মাত্র ৫ জন নিয়ে যাত্রা শুরু করেন অবনীত এবং সাকেত। এরপর তাঁদের সংস্থা যেমন অপ্পো, শাওমি, ভিভো পাশাপাশি ফ্লিপকার্ট এবং অ্যামাজন থেকে ফোন কিনতে শুরু করে যেগুলি ভালো এক্সচেঞ্জ অফারে মিলত। এর পর এসব ফোনে যদি কোম্পানির কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি বা অন্য কোনো সমস্যা থাকে তাহলে তা ঠিক করা হত। এরপর ফোন ঠিক হয়ে গেলে কোম্পানি তার অফলাইন রিটেইল পার্টনারের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সেগুলো বিক্রি করত। কোম্পানির নিজস্ব মোবাইল ডায়াগনস্টিক অ্যাপ রয়েছে, যার মাধ্যমে যেকোনো ফোনের সম্পূর্ণ কোয়ালিটি চেক করা হয়। ‘রিফিট গ্লোবাল’-এর পরবর্তী টার্গেট ৩৫০ কোটি টার্নওভার।

বিগত ৭ বছর ধরে সাংবাদিকতার পেশার সঙ্গে যুক্ত। ডিজিটাল মিডিয়ায় সাবলীল। লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার নেশা।

সম্পর্কিত খবর