উচ্চতা মাত্র তিন ফুট! সইতে হয়েছে অনেক গঞ্জনা, বঞ্চনা! আজ সফল ডাক্তার গণেশ

ডাক্তারি পেশাকে মানুষ একটু আলাদা চোখেই দেখেন। অনেকের কাছেই ডাক্তার মানে হল ‘ভগবান’। কারণ অনেকেই বিশ্বাস করেন, যেমন মানুষের বাঁচা মরা ভগবান ঠিক করেন ঠিক তেমনভাবেই চিকিৎসকদের হাতেই থাকে মানুষের জীবন মরণ। মৃতপ্রায় মানুষকে যখন কোনো চিকিৎসক বাঁচিয়ে তোলেন তখন মানুষের খুশির ঠিকানা থাকে না। কিন্তু আজ এই প্রতিবেদনে এমন একজন চিকিৎসককে নিয়ে আলোচনা হবে যাকে দেখলে এবং যার সম্পর্কে শুনলে আপনি আপনার কানকে বিশ্বাস করতে পারবেন না।

এই চিকিৎসকের উচ্চতা মাত্র ৩ ফুট। কিন্তু তাতে কী, মানুষের সেবায় তিনি দিন রাত এক করে কাজ করে চলেছে। আপনারো কি জানতে খুব কৌতূহল হচ্ছে যে কাকে নিয়ে কথা হচ্ছে? তাহলে আপনাদের জানিয়ে রাখি, আজ কথা হচ্ছে গণেশ বারাইয়া। ইতিমধ্যে তাঁর কপালে জুটেছে পৃথিবীর ‘সব থেকে খর্বকায়’ চিকিৎসক-এর তকমা। হাজারো টিপ্পনী, মানুষের অন্যদিকে দৃষ্টিতে তাকানো, ইত্যাদি সবকিছুকে তোয়াক্কা করে কাজ করে চলেছেন এই গণেশ।

   

গুজরাটের ভাবনগরের বাসিন্দা গণেশ বারাইয়া আজকাল তাঁর উচ্চতা ও ডিগ্রি নিয়ে খবরের শিরোনামে রয়েছেন। এমবিবিএস শেষ করে গণেশ এখন ভাবনগরের স্যার টি জেনারেল হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ করছেন। তিনি ভাবনগরের সরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। তার এই যাত্রা কিন্তু মোটেই সহজ ছিল না। এমবিবিএস ভর্তির জন্য তাকে দীর্ঘ আইনি লড়াই করতে হয়েছিল। আর এই লড়াইয়ের জন্য মূল কারণ তাঁর উচ্চতা। কম উচ্চতাই যেন গণেশের জীবনের অন্যতম বড় ‘ভিলেন’ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

গণেশ বারাইয়া শুরু থেকেই ডাক্তার হতে চেয়েছিলেন এবং ২০১৮ সালে তিনি মেডিকেল প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। যদিও এমসিআই ভর্তি করতে অস্বীকার করেছিল এই বলে যে তার উচ্চতা খুব কম এবং তিনি জরুরি কেসগুলি সামলাতে পারবেন না। এরপর এমসিআইয়ের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গণেশ গুজরাট হাইকোর্টে গিয়ে পিটিশন দাখিল করেন, কিন্তু তিনি মামলায় হেরে যান। চোখের সামনে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নটা ভেঙে যেতে দেখেছিলেন, কিন্তু হার না মেনে নতুন করে লড়াই শুরু করেন গণেশ। হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যান তিনি। ২০১৮ সালের অক্টোবরে সুপ্রিম কোর্ট গণেশের পক্ষে রায় দেয় এবং সুপ্রিম কোর্ট জানায় যে গণেশের উচ্চতা কম হওয়া সত্ত্বেও তিনি ডাক্তারি পড়তে পারেন এবং ভর্তি হতে পারেন।

সুপ্রিম রায়ে হাতে যেন চাঁদ পেয়ে যান গণেশ। এরপর ২০১৯ সালের ১ আগস্ট ভাবনগরের সরকারী মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস ভর্তি হন এবং এইভাবে সমস্ত প্রতিকূলতার পরে তার ডাক্তারি পড়াশোনা শুরু করেন। ২৩ বছরের গণেশ বারাইয়া এমবিবিএস পাশ করে বর্তমানে ইন্টার্নশিপ করছেন। একাধিক রিপোর্ট অনুসারে, তিনি আরও এনইইটি পিজি পরীক্ষা দেবেন এবং মেডিকেল ফিল্ডে আরও পড়াশোনা করবেন।

 

 

বিগত ৭ বছর ধরে সাংবাদিকতার পেশার সঙ্গে যুক্ত। ডিজিটাল মিডিয়ায় সাবলীল। লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার নেশা।

সম্পর্কিত খবর