ডিম বিক্রি করেন পড়াশোনা! আজ সফল IAS অফিসার, কাঁদিয়ে দেবে মনোজের কাহিনী

কথাতেই আছে ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। নইলে ডিম (EGG) বিক্রেতা থেকে সোজা আইএএস (Indian Administrative Service) অফিসার হওয়াটা কিন্তু মুখের কথা নয়। হ্যাঁ শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। বলা হয়, কোনো কিছু করার নেশা থাকলে কোনো অসুবিধাই পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন অনেক পরিশ্রম ও অপরিসীম ধৈর্য। আর তার জলজ্যান্ত উদাহরণ হলেন আইএএস মনোজ কুমার রাই (IAS Manoj Kumar Rai)।

বিহারের (Bihar) বাসিন্দা মনোজ কুমার রাইয়ের কাছে ফি দেওয়ার টাকা ছিল না। কিন্তু তিনি তার কঠোর পরিশ্রম দিয়ে সাফল্য অর্জন করেছেন যার জন্য হাজার হাজার মানুষ কেবল স্বপ্ন দেখে। বিহারের সুপলের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া মনোজ দ্বাদশ শ্রেনি পাশ করার পর ১৯৯৬ সালে গ্রাম ছেড়ে দিল্লি চলে আসেন এবং এখানে চাকরি খুঁজতে শুরু করেন। এর পর একদিন সিদ্ধান্ত নেন অনেক চাকরির সন্ধান হয়েছে এবার সবজি ও ডিমের দোকান বসাতে হবে। যাতে জীবিকা নির্বাহ করা যায়। ফলে যেমন ভাবা তেমন কাজ।

   

একদিন এমনই কাকতালীয় ঘটনা ঘটে। মনোজ জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে রেশন সরবরাহের চাকরি পান। জেএনইউ-তে এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয় মনোজ কুমার রাইয়ের সঙ্গে। যার জেরে বদলে যায় মনোজের জীবন। মনোজ একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে এখানে তিনি উদয়ের সাথে দেখা করেছিলেন। তিনিও সুপৌলের বাসিন্দা ছিলেন। এরপর ক্রমে দু’জনে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে ওঠেন। উদয় মনোজকে পড়াশোনা শেষ করার পরামর্শ দেন। মনোজেরও প্রস্তাবটা বেশ মনে ধরে। এবার আবারও একবার নতুন করে লড়াই শুরু হল মনোজের।

এইভাবে মনোজ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সান্ধ্য কলেজ থেকে স্নাতক হন। মনোজের গাইডের ভূমিকা পালন করেন উদয়। তিনি মনোজকে ইউপিএসসির জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেন। ২০০১ সালে মনোজ কুমার রাইয়ের আরেক বন্ধু তাঁকে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক রাসবিহারী প্রসাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় অধ্যাপক রাসবিহারী দিল্লিতে এসেছিলেন। তাঁর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর মনোজ পাটনায় যান এবং ভূগোলকে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে রেখে সেখানে প্রস্তুতি শুরু করেন। এরপর ২০০৫ সালে তিনি প্রথমবারের মতো ইউপিএসসি (Union Public Service Commission) সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশ নেন। এতে ব্যর্থ হলে তিনি পাটনা ছেড়ে দিল্লি ফিরে আসেন।

ias

মনোজ কুমার রাই তাঁর একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে UPSC-তে ইংরেজি এবং একটি আঞ্চলিক ভাষার কাগজ পাস করা বাধ্যতামূলক। যদি কেউ এটি ক্লিয়ার করতে সক্ষম না হয় তবে বাকি কাগজটি মূল্যায়ন করা হয় না। প্রথম চেষ্টাতেই ইংরেজি পেপার পাশ করতে পারেননি মনোজ। ইউপিএসসি-তে মোট তিনবার ফেল করার পর মনোজ কুমার ইংরেজিতে বেশি মনোনিবেশ করলেও মেইন ও ইন্টারভিউ পাশ করতে পারেননি।

মনোজ কুমার রাই অবশেষে ২০১০ সালে তার চতুর্থ প্রচেষ্টায় ইউপিএসসি পাস করতে সক্ষম হন। তিনি ইউপিএসসি-তে ৮৭০ র‍্যাঙ্ক অর্জন করেন এবং বর্তমানে ইন্ডিয়ান অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি সার্ভিসে (আইওএফএস) কর্মরত রয়েছেন।

বিগত ৭ বছর ধরে সাংবাদিকতার পেশার সঙ্গে যুক্ত। ডিজিটাল মিডিয়ায় সাবলীল। লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার নেশা।

সম্পর্কিত খবর