টাকা ছাড়াই এই দেশ থেকে এভাবে সবথেকে সস্তায় তেল আনবে ভারত! প্ল্যান মাথা ঘুরিয়ে দেবে

আর কোটি কোটি টাকা নয়, এবার একদম বিনামূল্যে তেল (Petroleum) কেনার পথে  গুটিগুটি পায়ে অগ্রসর হচ্ছে ভারত (India)। হ্যাঁ একদম ঠিক শুনেছেন। এখন নিশ্চয়ই ভাবছেন যে আচমকা কেন এরকম সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে ভারত? তাহলে বিস্তারিত জানতে ঝটপট পড়ে ফেলুন এই প্রতিবেদনটি। ভারতের শীর্ষস্থানীয় তেল কোম্পানি অয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস কর্পোরেশন (Oil and Natural Gas Corporation) কিছু লভ্যাংশের বিনিময়ে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলার (Venezuela) কাছ থেকে তেল কেনার জন্য আলোচনা করছে। এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ONGC-র প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলার লভ্যাংশ ভেনিজুয়েলায় আটকে আছে। জানা যাচ্ছে যে ওএনজিসি তার আটকে থাকা লভ্যাংশের বিনিময়ে ভেনেজুয়েলার কাছ থেকে তেল কেনার জন্য আলোচনা করছে।

ভেনেজুয়েলায় মেলে সবথেকে সস্তার তেল

২০২৩ সালের অক্টোবরে ভেনেজুয়েলা সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে একটি চুক্তির পর ভেনিজুয়েলার তেল ও গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর ওএনজিসি ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে তেল ক্রয় আলোচনার বিষয়টি সম্ভব হয়েছে। ভেনেজুয়েলায় ২০১৯ সাল থেকে তেল ও গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে ভেনেজুয়েলা ছিল ভারতের পঞ্চম বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী দেশ। ভেনেজুয়েলার সাথে তেল চুক্তি ভারতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ কারণ ভারত বিশ্বের বৃহত্তম তেল ক্রেতা। ভারত শুরু থেকেই বলে আসছে, তারা যেখানেই পাবে সেখান থেকে সস্তায় তেল কিনবে। এমন পরিস্থিতিতে যদি লভ্যাংশের বিনিময়ে ভেনেজুয়েলা থেকে তেল পাওয়া যায়, তাহলে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

৬০০ মিলিয়ন ডলার লভ্যাংশ বকেয়া রয়েছে

   

ভেনেজুয়েলার পেট্রাইওস ডি ভেনিজুয়েলা এসএ’র সান ক্রিস্টোবাল প্রকল্পেও ভারতের বিনিয়োগ রয়েছে। ওএনজিসি বিদেশ লিমিটেডের এক মুখপাত্র ও নিশ্চিত করেছেন যে সান ক্রাইস্টবল প্রকল্পে সংস্থার প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলার লভ্যাংশ বকেয়া রয়েছে। তিনি বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার পর লভ্যাংশের বিনিময়ে তেল কেনার কথা বলছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০০৮ সালে ওএনজিসি বিদেশ লিমিটেড সান ক্রিস্টোবাল প্রকল্পের ৪০ শতাংশ অধিগ্রহণ করে। এই প্রকল্পের ঘোষিত লভ্যাংশ ৪০০ মিলিয়ন ডলার।

একই সঙ্গে অঘোষিত লভ্যাংশও প্রায় ২০০ কোটি ডলার। ভেনেজুয়েলার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ কোম্পানির উপার্জন ব্যবহার করে দেশে পপুলিস্ট খরচ করেছেন। তারপর থেকে ভারতকে লভ্যাংশ দেওয়া হয়নি। ভারতের পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রক বা বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জানিয়েছেন, ‘ভেনিজুয়েলায় আটকে থাকা লভ্যাংশের বিনিময়ে আমরা তেল কার্গো কেনার চেষ্টা করছি। তবে ভেনেজুয়েলার তেল ও গ্যাসের ওপর থেকে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা আপাতত তুলে নেয়া হয়েছে। তদুপরি, ভেনেজুয়েলার দ্রুত উত্পাদন বাড়ানোর ক্ষমতা নেই। ‘

বকেয়ার বদলে তেল দেবে ভেনেজুয়েলা

এদিকে এই বিষয়ে পেট্রোলিয়াম সচিব পঙ্কজ জৈন জানিয়েছেন, “OVL-এর বকেয়া পাওনার বদলে তারা আমাদের কিছু তেল দিতে রাজি হয়েছে। আমরা উত্তোলনের তারিখের জন্য অপেক্ষা করছি।” ভেনেজুয়েলার বর্তমান উত্পাদন ক্ষমতা প্রতিদিন ৮-৮.৫ মিলিয়ন ব্যারেল, যেখানে বর্তমান উত্পাদন প্রতিদিন প্রায় ৭.৫ মিলিয়ন ব্যারেল। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে ভারত ভেনেজুয়েলা থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩ ০০,০ ব্যারেল তেল কিনত।  ভারত সরকারের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের হিসাবে, ভেনেজুয়েলা ভারতের পঞ্চম বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী ছিল। ২০১৯ সালে ভেনেজুয়েলা ভারতে প্রায় ১৬ মিলিয়ন টন অপরিশোধিত তেল রফতানি করেছিল। অর্থাৎ ভারত প্রায় ৫.৭ বিলিয়ন ডলারের তেল আমদানি করেছে। তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেকের অন্যতম সদস্য দেশ ভেনেজুয়েলায় বিশ্বের বৃহত্তম তেল মজুদ রয়েছে।

বিগত ৭ বছর ধরে সাংবাদিকতার পেশার সঙ্গে যুক্ত। ডিজিটাল মিডিয়ায় সাবলীল। লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার নেশা।

সম্পর্কিত খবর