টাটার সঙ্গে হাত মিলিয়ে সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রিতে বড় লাফ ভারতের! চিন দূর, অবাক গোটা বিশ্ব

চিনকে (China) জোরালো ধাক্কা দিতে ঘুঁটি সাজাচ্ছে ভার‍ত (India)। চিপ উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চায় সরকার। এ জন্য দেশে তিনটি সেমিকন্ডাক্টর প্লান্ট (Semiconductor fabrication plant) স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্র। দেশের প্রথম সেমিকন্ডাক্টর প্ল্যান্টটি গুজরাটের ঢোলেরায়, দ্বিতীয়টি গুজরাটের সানন্দে এবং তৃতীয়টি আসামের মরিগাঁওয়ে স্থাপন করা হবে। দেশের সেমিকন্ডাক্টরের এই সিদ্ধান্ত চিনকে বড়সড় ধাক্কা দেবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

আসলে ভারতের চিপ মিশন নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কৌতূহল রয়েছে। আমেরিকা, জাপান, তাইওয়ানের সংস্থাগুলি ভারতের দিকে ঝুঁকছে। ভারতের সেমিকন্ডাক্টর মিশন চীনের অস্বস্তি বাড়িয়েছে। আসলে সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে চীনের আধিপত্য। বিশ্বের মোট সেমিকন্ডাক্টর বিক্রির এক-তৃতীয়াংশ হয় চীনের দখলে। সেমিকন্ডাক্টরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চিন ও তাইওয়ানের ওপর নির্ভরশীল। সেমিকন্ডাক্টরের ব্যবসা বিশাল। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ৭ বছরে সেমিকন্ডাক্টরের বাজার দ্বিগুণ হবে।

   

টাটা গ্রুপ (Tata Group) যৌথ উদ্যোগে ২ টি প্ল্যান্ট তৈরি করবে। যার মধ্যে ১ টি গুজরাটে এবং অন্যটি আসামে তৈরি করা হবে। টাটা ইলেকট্রনিক্স এবং তাইওয়ানের পাওয়ার চিপ সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কর্পোরেশন (PSMC)-এর মধ্যে যৌথ উদ্যোগটি ৯১,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের সাথে গুজরাটের ধলেরাতে একটি চিপ ফ্যাব্রিকেশন প্ল্যান্ট তৈরি করবে। এমনই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।

সেমিকন্ডাক্টরের ক্ষেত্রে ভারত যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে চমকে যেতে বাধ্য চিন। ভারতের এই মিশন বানচাল করার চেষ্টায় নেমেছে চীনও। বর্তমানে সেমিকন্ডাক্টর বাজারে চীন ও তাইওয়ানের আধিপত্য। প্রতিবেদনে বলা হয়, সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন ও উৎপাদনে চীন তাইওয়ানের চেয়ে পিছিয়ে থাকতে পারে, কিন্তু চিপচালিত ডিভাইস উৎপাদনে চীনের অংশ ৩৫ শতাংশ। তাইওয়ান বর্তমানে বিশ্বের সেমিকন্ডাক্টর হাব। সেমিকন্ডাক্টর মার্কেট শেয়ারের ৬৩ শতাংশ তাইওয়ানের। সেমিকন্ডাক্টরের মাধ্যমে মাইক্রোচিপ প্রস্তুত করা হয়। চিন ও তাইওয়ান যদি মাইক্রোচিপ দিতে অস্বীকার করে, তাহলে গোটা বিশ্বে সংকট দেখা দেবে।

semi conductor

এই চিপসের জন্য গোটা বিশ্ব এখনও এই দুই দেশের ওপর নির্ভরশীল। যে কারণে সেমিকন্ডাক্টরের দিকে দ্রুত এগোচ্ছে ভারত। চিনের আশঙ্কা, ভারতে চিপ উৎপাদন শুরু হলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে ভারত বড় বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হবে। চিনের আধিপত্য খর্ব করতে ভারতের চিপ মিশনকে সমর্থন করছে আমেরিকা-সহ বিশ্বের অনেক বড় দেশ। এ কারণে চীনের উদ্বেগ বেড়েছে। ভারতের মিশন সফল হলে চীনের অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য ভেঙে পড়বে। এই মুহূর্তে চীনের অবস্থা খারাপ। চিনের ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টর ডুবছে। এখানে বেকারত্ব দ্রুত বাড়ছে। এখন চিপ তৈরির কোম্পানিগুলো হাতের বাইরে চলে গেলে চীনের অর্থনীতি বড় ধাক্কা খাবে।

সেমিকন্ডাক্টরকে বলা হচ্ছে নিউ এজ গোল্ড। যেকোনো ইলেকট্রনিক পণ্যের ক্ষেত্রে সেমিকন্ডাক্টর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টিভি, ফ্রিজ, ওভেন, ওয়াশিং মেশিন, স্মার্টফোন, স্পেস স্যাটেলাইট, রিমোট কন্ট্রোল সবই সেমিকন্ডাক্টরের জন্য প্রয়োজনীয়। এটি এই সমস্ত ইলেকট্রনিক ডিভাইস তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ভারতের সেমিকন্ডাক্টর মিশন সফল হলে চিনের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে।

বিগত ৭ বছর ধরে সাংবাদিকতার পেশার সঙ্গে যুক্ত। ডিজিটাল মিডিয়ায় সাবলীল। লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার নেশা।

সম্পর্কিত খবর