ED, শাহজাহান নয়! সন্দেশখালিকে এভাবে চিনিয়েছিলেন উত্তম কুমার! আজও তাজা স্মৃতি

এখন সকলের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে সন্দেশখালি (Sandeshkhali)। ইডির (Enforcement Directorate) ওপর হামলা, মহিলাদের ওপর অত্যাচার, জমি হরপ করে নেওয়া সহ একাধিক অভিযোগকে ঘিরে সরগরম উত্তর ২৪ পরগণা (North 24 Parganas) জেলার সন্দেশখালি গ্রামটি। তবে এই সন্দেশখালি গ্রামটি কিন্তু আপনিও দেখে থাকবেন নিশ্চিয়ই। বিশেষ করে আপনিও যদি পুরনো দিনের মানুষ হয়ে থাকেন বা পুরনো বাংলা সিনেমা দেখতে পছন্দ করে থাকেন তাহলে জানবেন শক্তি সামন্তর (Shakti Samanta) ‘অমানুষ’ (Amanush) সিনেমায় যে গ্রামটিকে দেখানো হয়েছিল সেটা এই সন্দেশখালি। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি।

আপনি জানলে অবাক হবেন, সেই সময়ে মহানায়ক (Mahanayak) উত্তম কুমারকে (Uttam Kumar) দেখতে এক কথায় হুমড়ি খেয়ে পড়ছিলেন গ্রামের বাসিন্দারা। শক্তি সামন্ত পরিচালিত ১৯৭৪ সালের অমানুষ ছবিটির শুটিং হয়েছিল সন্দেশখালির গ্রামেই। সেইসময়ে উত্তর কুমারকে দেখা কিছু মানুষজন এখনও সন্দেশখালি গ্রামে রয়েছেন। সন্দেশখালিতে উত্তম কুমারের আরও একটি সিনেমার শ্যুটিং হয়েছিল আর সেটা হল আনন্দ আশ্রম। এই সিনেমায় উত্তম কুমারের সঙ্গে অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর জুটি বেঁধেছিলেন। এছাড়া আরো বেশ কিছু সিনামার শ্যুটিং হয়েছিল যেমন ধামাখালিতে মুনমুন সেন, সন্তু মুখোপাধ্যায়ের ‘বান্ধবী’, দেব-এর ‘চাঁদের পাহাড়’ প্রমুখ।

   

১৯৭৪ সালের ঘটনা। সন্দেশখালি ২ ব্লকের ভাঙা তুষখালি গ্রামে শক্তিপদ রাজগুরুর লেখা ‘নয়া বসত’ উপন্যাস অবলম্বনে অমানুষ ছবির শ্যুটিংয়ের তোড়জোড় শুরু হয়। এখানে কলকাতার বেলেঘাটার এক ব্যবসায়ী মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের বাংলো ছিল ভাঙা তুষখালি গ্রামে। সেই সূত্রেই তাঁর লেখক বন্ধু শক্তিপদ মাঝে মধ্যে আসতেন ওই গ্রামে। সেইসময়ে মোট ২১ দিনের জন্য এই লঞ্চ ভাড়া করা হয়েছিল অমানুষ-এর জন্য।

PWD-র পুরনো বাংলোতে থাকতেন উত্তম কুমার। এই সিনেমার শ্যুটিং-এর সময়ে অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর ও উত্তম কুমারের সঙ্গে একটি ঘটনা ঘটেছিল যা আজও আলোচিত হয়। গানের শুটিংয়ের সময় সন্ধ্যা নেমে আসায় আলো কমে আসে। আর ছবি তোলা সম্ভব নয় জেনে শক্তি সামন্ত লঞ্চ ঘোরানোর নির্দেশ দেন। হঠাৎই বনের মধ্যে ঘন সন্ধ্যা নেমে এল। লঞ্চের ভিতর উত্তমকুমার, শর্মিলা ঠাকুর, উৎপল দত্তসহ আরও কয়েকজন। অন্ধকারে বনের ভিতর ছোট ছোট নদী, চালক ঠিক দিক খুঁজে পাচ্ছিলেন না। কিছু দূর চলার পর মনে হচ্ছিল আরও গভীর বনের ভিতর তাঁরা ঢুকে পড়ছেন।

শর্মিলা ঠাকুর ভয়ে অস্থির। লঞ্চের উপর শক্তি সামন্ত। কিছু দূর যাওয়ার পর তাঁরা একটা আলো দেখতে পেলেন। চালককে বলেন, আলোর কাছে লঞ্চ নিয়ে চলো। কাছে গিয়ে দেখা গেল একটা ছোট্ট দোকান। লঞ্চ থেকে নেমে শক্তি সামন্ত বলেন, ‘আপনাদের এখানে কোনও শুকনো খাবার হবে। আমরা শহর থেকে এসেছি খাবার শেষ।’ দোকানদার এক ধামা মুড়ি নিয়ে লঞ্চের ভিতর এসে দেখেন উত্তমকুমার।

ব্যস আর কি! মহানায়কে সামনে দেখে তাঁকে দেখে মুড়ির ধামা রেখে প্রণাম করলেন। তারপর বললেন, ‘আপনারা একটু অপেক্ষা করুন আমি আসছি।’ এই বলে তিনি চলে গেলেন, কিছুক্ষণ পর দেখা গেল নদীর পাড়ে শত শত মানুষের হাতে হ্যারিকেন। তারা চিৎকার করে বলছে, আমরা উত্তমকুমারকে দেখতে চাই! শেষে শক্তি সামন্তের অনুরোধে উত্তমকুমার লঞ্চ থেকে বের হয়ে সবার সঙ্গে দেখা করেন। তা না হলে তাঁদের নিস্তার ছিল না।

বিগত ৭ বছর ধরে সাংবাদিকতার পেশার সঙ্গে যুক্ত। ডিজিটাল মিডিয়ায় সাবলীল। লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার নেশা।

সম্পর্কিত খবর