শিক্ষক ছাড়া নিজেই পড়ে UPSC-তে নজরকাড়া র‍্যাঙ্ক হাসিল মানসের! গর্বিত গোটা ঝাড়গ্রাম

ইউপিএসসি (Union Public Service Commission) পরীক্ষায় বসা, সেটাই পাশ করা কিন্তু মুখের কথা নয়। এই UPSC পরীক্ষাকে ভারতের (India) সবথেকে কঠিনতম পরীক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রত্যেক বছর কয়েক লক্ষ মানুষ এই পরীক্ষায় বসেন বড় কিছু হওয়ার লক্ষ্যে। কিন্তু কৃতকার্য হতে পারেন হাতেগোনা কয়েকজন। কিন্তু বাংলার এক যুবক যা করে দেখিয়েছে তা হয়তো স্বপ্নেও কেউ ভাবতে পারবে না।

জীবনে সে কোনোরকম কোচিং নেয়নি। অথচ ঝাড়গ্রামের (Jhargram) এক যুবক ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসার মতো দুঃসাহসিক কাজ করে শিরোনামে উঠে এসেছে। শুনতে অবিশ্বাস্যকর লাগলেও এটাই কিন্তু সত্যি। কোনোরকম কোচিং ছাড়াই ইউপিএসসি পরীক্ষায় পাশ করে সর্বভারতীয় স্তরে ১৪ ব়্যাংক করেছেন ঝাড়গ্রামের মানস মাহাত। মানসের এহেন সাফল্যে স্বাভাবিকভাবেই গর্বে বুক ফুলে উঠেছে জেলাবাসীর।

   

তবে পথচলাটা কিন্তু সহজ ছিল না মানসের। জানা গিয়েছে, ৩২ বছর বয়সী মানস ঝাড়গ্রামের নয়াগ্রাম ব্লকের প্রত্যন্ত চাঁদাবিলা গ্রামের বাসিন্দা। আর প্রত্যন্ত গ্রামেয়ে বাসিন্দা হয়ে ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসা আবার সেখানে পাশ করা কিন্তু চারটিখানি কথা নয়। যাইহোক, বিগত ২৩ ফেব্রুয়ারি ইউপিএসসি-র অ্যাসিস্ট্যান্ট জিওফিক্সিজ পদে চাকরির পরীক্ষার ফাইনাল মেধা তালিকা প্রকাশিত হয়। আর এই মেধা তালিকা দেখে চোখ কপালে ওঠে মাহাত পরিবারের।

এই তালিকা অনুযায়ী, মানস মাহাত দেশের মধ্যে ১৪তম স্থান অর্জন করেছেন। তাঁর সাফল্যে খুশি ঝাড়গ্রামবাসীও। এর আগে মানস সিএসআর নেট এবং রাজ্যের সেট পরীক্ষাতেও উর্ত্তীণ হয়েছেন তিনি। এদিকে সেট পরীক্ষার পর সাফল্য এল ইউপিএসসি-তে।

নিজের সাফল্য প্রসঙ্গে মানস বলেন,’আমার বাড়িতে প্রচুর বই রয়েছে, ওই বই পড়ে এবং বিষয়ের উপরে দক্ষতাই আমার সফলতা নিয়ে এসেছেন। বইয়ের বিকল্প নেই। শুধুমাত্র বই এবং ইন্টারনেটের সাহায্যে আমি অ্যাসিস্ট্যান্ট জিওফিক্সিজ পদে উর্ত্তীণ হয়েছি। মাত্র দু’নম্বরের জন্য জিওসায়েন্টিস পদে পাইনি। আশাকরি ওখানে ওয়েটিং লিস্টে থাকব।’

অ্যাসিস্ট্যান্ট জিওফিক্সিজ পদে চাকরির প্রসঙ্গে মানস বলেন, ‘আমি এমএসসি-তে জিওফিজিক্সের কোনও পেপার পড়িনি। কিন্তু বিষয়টি ভালো লাগাতে আমি নতুন বই কিনে চাকরির পরীক্ষার জন্য পড়তে শুরু করি। এখানে বিষয়ের দক্ষতা ও গভীরতা খুব গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। ২০২৩ সালে কলকাতায় গিয়ে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিলাম। তারপর ওই পরীক্ষায় পাশ করায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি দিল্লি ইউপিএসসি ভবনে গিয়ে ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম। ২৩ ফেব্রুয়ারি মেধা তালিকা প্রকাশ হয়েছে। তাতে আমি ১৪তম স্থান অর্জন করতে পেরেছি।’

স্থানীয়দের মতে, মানসের বাবা চুনারাম মাহাত খাদ্য দফতরের ফুড ইন্সপেক্টর পদ থেকে অবসর নিয়েছেন বেশ কিছু সময় হল। এদিকে তাঁর মায়ের নাম হল গন্ধেশ্বরী। মানস তিন ভাই। মানসের বড় দাদা বিদ্যুৎ দফতরে এবং মেজ দাদা হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। বাড়ির ছোট ছেলে মানস ২০০৮ সালে স্থানীয় চাঁদাবিলা এসসি হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করেন। ২০১০ সালে ঝাড়গ্রাম বাণীতীর্থ হাইস্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করে ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে ফিজিক্স নিয়ে ভর্তি হন তিনি। তারপর ২০১৩ সালে গ্র্যাজুয়েশন পাশ করে খড়গপুর আইআইটি-তে এমএসসি-তে ভর্তির সুযোগ পায়।

সেখান থেকে ২০১৫ সালে পাশ করে সিএসআর নেট এবং রাজ্যের সেট পরীক্ষায়ও উর্ত্তীণ হন। তারপর গবেষণা করার সিদ্ধান্ত নিলেও মাঝপথে ওই তা বদল করেন। ২০১৯ সালে প্রত্যন্ত চাঁদাবিলা গ্রামে ফিরে আসেন মানস। শুরু করেন চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি।

বিগত ৭ বছর ধরে সাংবাদিকতার পেশার সঙ্গে যুক্ত। ডিজিটাল মিডিয়ায় সাবলীল। লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার নেশা।

সম্পর্কিত খবর