প্রীতি পোদ্দার: সমাজে নারী এবং মহিলাদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত একাধিক নিয়ম জারি করা হলেও সমাজে এখনও তাঁদেরকে নানা নানা অপরাধমূলক এবং আপত্তিকরমূলক মন্তব্য শুনতে হয়। এমনকি আইন রক্ষক পুলিশ এবং আইনজীবীদের মুখেও মহিলাদের নিয়ে নানা আপত্তিকর মন্তব্য শুনতে হয়। তবে সম্প্রতি হাইকোর্টের বিচারপতির মুখে উঠে আসল মহিলা আইনজীবীকে নিয়ে করা এক অবমাননাকর মন্তব্য। যা নিয়ে উথাল পাথাল গোটা সোশ্যাল মিডিয়া।
“পাকিস্তান” মন্তব্যের জন্য তীব্র সমালোচনায় বিচারপতি!
সম্প্রতি কর্ণাটক হাইকোর্টের একটি সাম্প্রতিক ঘটনায় বিচারক বেদব্যাসাচার শ্রীশানন্দ বেঙ্গালুরুর পাশের একটি মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলকে ‘পাকিস্তান’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেন, “ওই এলাকাটিতে একেকটি অটোতে ১০ জন করে যাত্রী ওঠেন। যতই দক্ষ পুলিশ অফিসার নিয়োগ করা হোক না, ওখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়। ওখানে পুলিশ আধিকারিকদের মারধর করা হয়। ওটা আসলে ভারতের অংশ নয়, পাকিস্তানের মতো।” আর সেই ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই রীতিমত তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। আসলে ওই অঞ্চলের গোরি পালিয়া এলাকায় এক বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়া বিবাদের মামলায় ওই মন্তব্য করেন কর্ণাটক হাইকোর্টের ওই বিচারক। যার ফলে কর্ণাটক হাই কোর্টের ওই বিচারপতির মন্তব্যে স্বাভাবিকভাবেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
মহিলা আইনজীবীকে আপত্তিকর মন্তব্য বিচারপতির
আর এই আবহেই সোশ্যাল মিডিয়ায় আরও একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। যেখানে দেখা যাচ্ছে বিচারপতি বেদব্যাসাচার শ্রীশানন্দ নারী আইনজীবীকে নিয়ে অসংবেদনশীল ও আপত্তিকর মন্তব্য করে তিরস্কার করতে দেখা যাচ্ছে। এমনকি বিচারপতি ওই মহিলা আইনজীবীকে বলেছেন যে বিরোধী পক্ষ সম্পর্কে তিনি অত্যাধিক জানেন। এমনকি ওই মহিলা আইনজীবী নাকি পরের বার অন্তর্বাসের রঙও বলতে পারবেন। যার ফলে এক মারাত্মক প্রভাব পড়ে আইনজীবীদের মনে। আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিওটি পোস্ট করেছেন এবং বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করেছেন।
We call upon the Chief Justice of India to take suo moto action agsinst this judge and send him for gender sensitisation training. pic.twitter.com/MPEP6x8Jov
— Indira Jaising (@IJaising) September 19, 2024
ওই ঘটনার পরপরই কর্ণাটক হাই কোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে ওই মামলা এবং বিচারপতির মন্তব্য নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এবং শীর্ষ আদালত জানিয়েছে যে প্রয়োজন হলে কর্ণাটক হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করে এই রিপোর্ট জমা দিতে হবে। এছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি এস খান্না, বিচারপতি বি আর গভই, বিচারপতি এস কান্ত এবং বিচারপতি হৃষীকেশ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছেন যে আজকের যুগে আদালতে কী হচ্ছে, কী বলা হচ্ছে সেগুলিও ভীষণভাবে নজরে রাখতে হবে বিচারপতিদের। তাই হাই কোর্টের বিচারপতিদের জন্যও নির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করা উচিত।