দেবপ্রসাদ মুখার্জী: আজকাল আমাদের জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে পড়েছে মোবাইল, ওয়াকি টকির মতো ইলেকট্রিক গ্যাজেট। এগুলি ছাড়া আমাদের জীবনযাপন একপ্রকার অচল। কিন্তু ভাবুন তো, যদি এই ধরণের গ্যাজেটগুলি আচমকা ফেটে যেতে শুরু করে! তাহলে কি আপনি মোবাইল ফেলে দৌড় দেবেন? শুনতে অবাক লাগলেও এখন এমন আতঙ্কের পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে লেবানন দেশে। তার বিহীন গ্যাজেট দেখলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে মানুষজন।
সম্প্রতি লেবাননে এমনই অদ্ভুত এক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এই দেশের মানুষজন কোনো ইলেকট্রনিক গ্যাজেট ছোঁয়ার সাহস পাচ্ছে না। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, যদি রাস্তায় কারও মোবাইল বা ওয়াকি-টকির মতো কোনো ডিভাইস পড়েও থাকে, তাহলেও কেউ সেগুলিকে তুলতে সাহস পাচ্ছে না। এর নেপথ্যে রয়েছে একাধিক বিস্ফোরণের ঘটনা। চলুন, এই সম্পর্কে একটু বিস্তারে জেনে নেওয়া যাক।
জোড়া বিস্ফোরণে বাড়ছে আতঙ্ক
মঙ্গলবার লেবাননে হিজবুল্লা গোষ্ঠীর একটি পেজার বিস্ফোরণ হয়। আর এই ঘটনায় হাজার হাজার মানুষ আহত হয়। এর পর বুধবার, আরেকটি ওয়াকি-টকির বিস্ফোরণে অন্তত ২০ জন নিহত এবং ৪০০ জনেরও বেশি আহত হয়। এই ঘটনার পর থেকে লেবাননে ছড়িয়ে পড়েছে বিস্ফোরণের আতঙ্ক। সৌদি আল হাদথ নেটওয়ার্ক থেকে জানা গেছে যে লেবাননে মানুষ আতঙ্কে আছে এবং সেই কারণেই ওয়্যারলেস ডিভাইসগুলো থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছে।
দুই বিস্ফোরণে মৃত ৩৩ জন
নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী, বুধবার যে ওয়াকি-টকি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, তা আগের দিন পেজার বিস্ফোরণের তুলনায় বড় ছিল। এর কারণে বিস্ফোরণের ধ্বংসাত্মক ক্ষমতাও বেশি ছিল। যদিও পেজারের চেয়ে ওয়াকি-টকির ব্যবহার কম, তবুও এই বিস্ফোরণে ৪৫০ জন আহত ও ২০ জন নিহত হয়। যেখানে পেজার বিস্ফোরণে ২,৭০০ জন আহত ও ১৩ জন নিহত হয়েছিল।
ওয়াকি-টকি বিস্ফোরণের তীব্রতা কেমন ছিল?
কিন্তু কেমন ছিল এই বিস্ফোরণ? এই বিষয়ে বেরুতের একজন ৫৪ বছর বয়সী হুসাইন আওয়াদা, টাইমসকে বলেন, “আমি এমন কিছু দেখেছি যা আপনি সাধারণত সিনেমায় দেখেন।” তিনি জানান যে বুধবার একজন ব্যক্তি বেরুর রাস্তায় একটি অ্যাম্বুলেন্সকে পার করার জন্য রাস্তায় নেমে কাজ করছিলেন। সেই সময়ে তাঁর হাতে থাকা ওয়াকি-টকির বিস্ফোরণ হয়। তাতে তাঁর হাত উড়ে যায়।
ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে দূরে থাকছে মানুষজন
বর্তমান পরিস্থিতিতে লেবাননের মানুষ যেকোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে ভয় পাচ্ছে। এমনকি সোলার পাওয়ার সিস্টেম এবং ইলেকট্রিক গাড়ি বা স্কুটার, লাইটার থেকেও দূরত্ব বজায় রাখছে মানুষজন। এই বিষয়ে ২২ বছর বয়সী ব্যবসায়ী আলি বলেন, ‘মানুষ আতঙ্কে ফোন ফেলে দেওয়া শুরু করে, কারণ তারা মনে করেছিল এগুলোও ফেটে যাবে। আমি একজনকে দেখেছি, যার মুখের অর্ধেকটা ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে, তার চোখ বেরিয়ে পড়েছিল, এবং চারদিকে শুধু রক্ত।”