দেবপ্রসাদ মুখার্জী: একটি দেশ তখনই উন্নত হয়, যখন সেই দেশের মানুষজনের রোজগার ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পায়। সেই কারণে মাথাপিছু GDP যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং জনগণের গড় আয়ের সূচক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি দেশের মোট দেশজ উৎপাদনকে সেই দেশের জনসংখ্যার সাথে ভাগ করে বের করা হয়।
এবার দেশের মাথাপিছু GDP অনেক বিষয়ের উপর নির্ভরশীল হয়। যেমন কোনো দেশের খনিজ শিল্প রপ্তানি করে দেশের GDP বৃদ্ধি পেতে পারে। একইভাবে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটলে বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার বড় হয়। সেক্ষেত্রে GDP বৃদ্ধি পায়। একইভাবে দেশের উন্নত ও সহজ কর ব্যবস্থা অনেক বৈদেশিক ব্যবসার বিনিয়োগে সহায়তা করে। এইসব কারণে দেশের মাথাপিছু GDP বৃদ্ধি পায়। এখন একনজরে মাথাপিছু GDP অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ ১০টি ধনী দেশের সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক
১. লুক্সেমবার্গ (Luxembourg)
লুক্সেমবার্গ পৃথিবীর শীর্ষ ধনী দেশগুলির মধ্যে অন্যতম। এই দেশের মাথাপিছু GDP প্রায় ১,৪৩,৭৪২.৬৯ মার্কিন ডলার এবং দেশের কর্মসংস্থানের হার ৬৮.৫%। দেশটির জনসংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায়, এটি একটি প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র। দেশটির অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা মূলত আর্থিক পরিষেবা, ইন্টারন্যাশনাল ব্যাঙ্কিং, এবং বিনিয়োগের উপর নির্ভরশীল।
২. আয়ারল্যান্ড (Ireland)
আয়ারল্যান্ডের মাথাপিছু GDP প্রায় ১,৩৩,৮৯৫.৩১ মার্কিন ডলার এবং দেশটির কর্মসংস্থানের হার ৬৬.৭%। আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি ও ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির কেন্দ্র হিসেবে আয়ারল্যান্ডের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কর্পোরেট ট্যাক্সের হার কম হওয়ায় অনেক বহুজাতিক কোম্পানি আয়ারল্যান্ডে বিনিয়োগ করে।
৩. ম্যাকাও (Macau SAR)
চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল ম্যাকাও এর মাথাপিছু GDP প্রায় ১,৩৪,১৪০.৯৩ মার্কিন ডলার এবং দেশটির কর্মসংস্থান হার ৯৩.০%। এটি মূলত পর্যটন ও জুয়া খাতের উপর নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক ক্যাসিনো এবং পর্যটন শিল্প ম্যাকাওয়ের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান উৎপাদন ক্ষেত্র।
৪. সিঙ্গাপুর (Singapore)
সিঙ্গাপুরের মাথাপিছু GDP প্রায় ১,৩৩,৭৩৭.৪৭ মার্কিন ডলার এবং দেশটির কর্মসংস্থান হার ৬৭.৮%। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র এবং ব্যবসা, প্রযুক্তি, ও বিনিয়োগ খাতের জন্য বিখ্যাত। সিঙ্গাপুরের অর্থনৈতিক শক্তির পেছনে রয়েছে এর স্ট্র্যাটেজিক অবস্থান ও বন্দর ভিত্তিক বাণিজ্য।
৫. কাতার (Qatar)
কাতারের মাথাপিছু GDP প্রায় ১,১২,২৮২.৯২ মার্কিন ডলার এবং দেশটির কর্মসংস্থান হার ৯৭.০%। কাতার মূলত প্রাকৃতিক গ্যাস এবং তেলের রপ্তানি থেকে আয় করে। এশিয়ার অন্যতম ধনী দেশ হিসেবে, তারা তাদের সম্পদকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়নে ব্যবহার করছে।
৬. সংযুক্ত আরব আমিরশাহী (United Arab Emirates)
সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর মাথাপিছু GDP প্রায় ৯৬,৮৪৫.৮৫ মার্কিন ডলার এবং দেশটির কর্মসংস্থান হার ৯৪.০%। তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস খাত দেশটির অর্থনীতির প্রধান অংশ হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে এই দেশ পর্যটন, রিয়েল এস্টেট এবং প্রযুক্তির দিকে মনোনিবেশ করেছে এবং তা থেকে রোজগারও করছে।
৭. সুইজারল্যান্ড (Switzerland)
সুইজারল্যান্ডের মাথাপিছু GDP প্রায় ৯১,৯৩১.৭৫ মার্কিন ডলার এবং এই দেশের কর্মসংস্থান হার ৮১.৫%। দেশটি শক্তিশালী ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা, উচ্চ মানের প্রযুক্তি এবং ঘড়ি শিল্পের জন্য বিখ্যাত। সুইজারল্যান্ডের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিষেবাগুলির জন্য এটি বিশ্বে প্রসিদ্ধ।
৮. স্যান ম্যারিনো (San Marino)
স্যান ম্যারিনো নামের ছোট্ট ইউরোপীয় দেশের মাথাপিছু GDP প্রায় ৮৬,৯৮৮.৯৯ মার্কিন ডলার এবং এই দেশের কর্মসংস্থান হার ৭০.০%। দেশটি মূলত পর্যটন শিল্প থেকে রোজগার করে। সেই সঙ্গে শিল্প খাতেও ভালো রোজগার করে এই দেশ।
৯. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (United States)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাথাপিছু GDP প্রায় ৮৫,৩৭২.৬৯ মার্কিন ডলার এবং দেশটির কর্মসংস্থান হার ৬২.৫%। বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা, আর্থিক খাত এবং সামরিক হল যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির মেরুদণ্ড।
১০. নরওয়ে (Norway)
নরওয়ের মাথাপিছু GDP প্রায় ৮২,৮৩১.৭৮ মার্কিন ডলার এবং এই দেশের কর্মসংস্থান হার ৭০.০%। তেল, গ্যাস এবং খনিজ সম্পদের উপর নির্ভরশীল হলেও নরওয়ে সামাজিক কল্যাণ এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে বেশ উন্নত। এটি উত্তর ইউরোপের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতি।