শ্বেতা মিত্র, কলকাতাঃ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটা দিন, ব্যস তারপরেই শুরু হতে চলেছে বাঙালির সবথেকে বড় উৎসব দুর্গাপুজো। ইতিমধ্যে সকলের কাউন্টাডাউনও শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে এবারের উৎসবের রং যেন খানিকটা হলেও ফিকে। তার কারণটা অবশ্যই হল আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের সঙ্গে ঘটে যাওয়া পাশবিক ঘটনা। এই ঘটনা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে, বাংলা তথা দেশে কোনও জায়গায় মেয়েরা আদৌ সুরক্ষিত তো? এদিকে এই ঘটনার আবহে এক বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে সকলকে চমকে দিল মল্লিক পরিবার।
ক্যালেন্ডার বলছে দুর্গাপুজো আসতে নাকি আর মাত্র ২০টা দিন বাকি। কিন্তু বাংলার আকাশে বাতাসে যেন সেই পুজোর সুবাসই যেন হারিয়ে গিয়েছে। উৎসবের মেজাজে থাকার বদলে এখন মানুষ প্রতিবাদী মেজাজে রয়েছেন। মহিলা চিকিৎসকে সুবিচার পাইয়ে দিতে বহু সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে চিকিৎসকদের রাত রাস্তাতেই কাটছে। সকলের মুখে শারদীয়া শুভেচ্ছা নয়, রয়েছে ‘We Want Justice’ স্লোগান। এদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদে রঞ্জিত মল্লিক ও কোয়েল মল্লিকের পরিবারের পুজো নিয়ে বিরাট আপডেট প্রকাশ্যে এল। জানা যাচ্ছে, ১০০ বছরে পা দিতে চলে মল্লিক বাড়ির পুজো এ বছর একটু ব্যতিক্রমী।
মল্লিক বাড়িতে হবে না উৎসব
এমনিতে জন্মাষ্টমীর সময় থেকেই মল্লিক বাড়িতে প্রতিমা তৈরির জন্য মাটিতে হাত পড়ে যায় কারিগরদের। এবারেও সেটার ব্যতিক্রম ঘটেনি। কিন্তু এবছর মল্লিক বাড়িতে পুজো তো হবে কিন্তু উৎসব হবে না। সেইসঙ্গে গত ১০০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মল্লিক বাড়ির দরজা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন।
কলকাতা শহরে যে কয়টি বাড়িতে ঐতিহ্য মেনে দুর্গাপুজো হয় সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল রঞ্জিত মল্লিকের বাড়ির পুজো। যারা বনেদি বাড়ির পুজো দেখতে পছন্দ করেন তাঁদের বাকেট লিস্টে মল্লিক বাড়ির পুজো থাকবেই থাকবে। কিন্তু এবারে সকলের সেই ইচ্ছা পূরণ হবে না।
বড় মন্তব্য রঞ্জিত মল্লিকের
বাড়ির পুজো প্রসঙ্গে বড় মন্তব্য করেছেন রঞ্জিত মল্লিক। তিনি বলছেন, ‘১০০ বছরে আমাদের বাড়ির পুজো কোনোদিন বন্ধ হয়নি। পরিবারে বিপর্যয় এসেছে, এমনকি মৃত্যুর মতো ঘটনার ঘটেছে। তারপরেও পুজো বন্ধ হয়নি। আমাদের প্রতিমারও কোনোও পরিবর্তন হয় না। ‘নায়ক’ ছবির পুজোর দৃশ্যের শ্যুটিং তো আমাদের বাড়িতেই। এই বছর আমরা একটা অদ্ভুত পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আরজি করের ঘটনা কেউ ভুলতে পারছেন না। আমাদেরও একই অবস্থা। পুজোর আনন্দটাই যেন ম্লান। সেইখানে অনেকটা খামতি রয়ে গিয়েছে। তবে পুজো বন্ধ হবে না। ১০০ বছরে পা দিচ্ছে আমাদের ভবানীপুরের বাড়ির পুজো। কাজেই বাড়িতে পুজোর আয়োজন চলছেই।’
তিনি আরও জানান, ‘১০০ বছরে এই প্রথম আমাদের বাড়ির পুজো জনসাধারণের জন্য হবে না। তার প্রথম কারণ অবশ্য আরজি কর আবহ। এই পরিস্থিতিতে বাড়িতে পুজো হবে বটে, কিন্তু উৎসব নয়। প্রত্যেক বছর মল্লিক বাড়ির ঠাকুর দালানের দ্বার অবারিত থাকে। এই বছরে সেটা আমরা রাখতে পারছি না। ফলে সাধারণ মানুষদের মল্লিকবাড়ির ঠাকুর দেখতে একটু সমস্যা হতে পারে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা নিজেরাই বিব্রত রয়েছি। পুজো মানেই যে অনাবিল আনন্দ, শিশুরা যেন পাখির মতো উড়ে বেড়ায়.. সেই আনন্দের আবহে এই বছর ভাটা পড়েছে। দ্বিতীয় কারণ হল, এবার পুজো ১০০ বছরে পা দিল। ফলে আমাদের অনেক আত্মীয় এবার আসছেন। বাড়িতেই অনেক মানুষ থাকবেন, সেই কারণে আর সাধারণ মানুষদের জন্য এই বছর বাড়ির দরজা খোলা রাখা হবে না। তবে মানুষের এতে অসুবিধা হলে আমরা দুঃখিত তার জন্য।’