প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে জুনিয়র চিকিৎসক সহ আন্দোলনকারীরা কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের পদত্যাগের দাবি নিয়ে লালবাজার অভিযান চালিয়েছিল। সেখানে গিয়ে বিনীত গোয়েলকে মেরুদণ্ড উপহার দিয়ে এসেছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। এমনকি সোমবার বিকালে কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করার পরও জুনিয়র চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, বিনীত গোয়েলকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপার সদর্থক আলোচনা করা হয়েছে। পাশাপাশি বৈঠক শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের সামনে জানিয়ে দেন যে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের দাবি মেনে বিনীত গোয়েলকে সিপি-র পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
নতুন সিপি হিসেবে নিযুক্ত মনোজ ভার্মা!
গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার বিকেলে নবান্ন জানিয়েছে, মনোজ ভার্মাকে কলকাতার নতুন পুলিশ কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি এতদিন এডিজি আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বে ছিলেন। বেশ কয়েক জন IPS অফিসারের নাম তালিকায় থাকলেও শেষ অবধি মনোজকেই বেছে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে কলকাতা এবং রাজ্য পুলিশের একাধিক পদে বদল আনা হয়েছে। অন্যদিকে কলকাতার সদ্যপ্রাক্তন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে পাঠানো হয়েছে এডিজি (এসটিএফ) পদে। কিন্তু একসময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মনোজ ভার্মাকেই সিপিএম এর দালাল বলে বিদ্রুপ করেছিল।
সিপিএমের দালাল বলে কটাক্ষ করা হত মনোজকে!
সূত্রের খবর, মনোজ পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার হিসেবে এক দারুণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। সেই সময় রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার এর আসর ছিল। জঙ্গলমহল জুড়ে মাওবাদীদের কার্যকলাপ তুঙ্গে ছিল তখন। মনোজ ভার্মা সেই কার্যকলাপ রুখতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করেছিলেন। এবং ‘কাউন্টার ইনসার্জেন্সি ফোর্স’-এর দায়িত্বেও ছিলেন মনোজ। এর পর ডিআইজি পদমর্যাদায় উন্নীত হয়ে মনোজ চলে যান শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটে। পাশাপাশি বিরোধীদের শায়েস্তা করতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার ছিল। তাইতো তিনি সেই সময় বিরোধীদের চক্ষুশূল ছিলেন। এমনকী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও কটাক্ষ করতেন মনোজ ভার্মাকে নিশানা করে। তবে ক্ষমতার বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গিয়েছে অনেক কিছুই। পাল্টে গিয়েছে সম্পর্কের সমীকরণ।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে সেই সময় কোথাও না কোথাও খুন, মারামারি, গন্ডগোল লেগেই থাকত। সেই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার মনোজকে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের প্রধান করে পাঠায়। এবং ব্যারাকপুরের সিপি হিসাবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে মনোজ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। সেই কারণে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে সেই বছর ‘পুলিশ পদক’ সম্মানে ভূষিত করেন। এমনকি ২০১৭ সালে রাজ্য সরকারের পুলিশ পদক পেয়েছিলেন মনোজ।