প্রীতি পোদ্দার, কলকাতা: গতকাল কালীঘাটে দীর্ঘ বৈঠক হয় জুনিয়র চিকিৎসক এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আর সেই বৈঠকের পরই মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে মুখোমুখি হন। রাত প্রায় ১২ টায় কালীঘাটে নিজের বাসভবনের বাইরে দাঁড়িয়ে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কলকাতা পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে বিনীত গোয়েলকে সরিয়ে দেওয়ার যে দাবি জুনিয়র ডাক্তাররা করেছেন, তা মেনে নেওয়া হচ্ছে। আর তা শুনেই প্রশ্ন উঠছে বিনীতের পর কে হতে পারেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার?
বিনীত গোয়েলের বদলি!
গতকাল অর্থাৎ সোমবার জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মেনে কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল-সহ ডিসি নর্থ, স্বাস্থ্য অধিকর্তা, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকে বদলি করা হচ্ছে বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী এদিন সকলের উদ্দেশে জানান, ডাক্তারদের দাবি মেনে কলকাতা পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে সরানো হচ্ছে বিনীত গোয়েলকে। এবং মঙ্গলবার বিকেল ৪টের পর নতুন সিপি-কে নিয়োগ করা হতে চলেছে। তবে শুধু বিনীত গোয়েল নয় ডিসি নর্থ অভিষেক গুপ্তা, স্বাস্থ্য অধিকর্তা চিকিৎসক দেবাশিস হালদার, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা চিকিৎসক কৌস্তভ নায়েককে বদল করা হচ্ছে।
নয়া পুলিশ কমিশনার হিসেবে কাদের নাম উঠে এসেছে?
নবান্নের সূত্রে জানা গিয়েছে, আরজি কর কাণ্ডের আবহে অনেক দিন ধরেই দুটি নাম উঠে আসছে পুলিশ কমিশনার হিসেবে। কারণ এ বছর, ৩১ ডিসেম্বর পুলিশ কমিশনার পদে বিনীতের তিন বছরের মেয়াদও শেষ হয়ে যেত। সেক্ষেত্রে নতুন কমিশনার আনার কথা আগে থেকেই চর্চা করা হচ্ছিল। কিন্তু মাঝে আরজি কর কাণ্ড ঘটে যাওয়ায় জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন মেয়াদ শেষের আগেই বিনীতের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে চলেছে। অগত্যা নবান্নকে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হল। আলোচনায় যেই দুই মুখের কথা বলা হচ্ছিল, তাঁরা হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিরেক্টর সিকিউরিটি পীযূষ পাণ্ডে এবং এডিজি সিআইডি আর রাজশেখরণ।
জানা যায়, অতীতে লালবাজারে গোয়েন্দা প্রধান হিসাবে কাজ করার পাশাপাশি মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ডেপুটেশনে এসপিজিতে ছিলেন পীযূষ পাণ্ডে। তবে পীযূষ এবং রাজশেখরণ ছাড়াও আরও দুই পুলিশ কর্তার নামও আলোচনায় চলে এসেছে। তাঁরা হলেন, বর্তমানে এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতীম সরকার এবং আইপিএস অফিসার জাভেদ শামিম। গতকালের জুনিয়র ডাক্তার এবং মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে জাভেদ শামিমকে দেখা গিয়েছিল। যদিও এবার শেষ পর্যন্ত দেখার বিষয় কার ভাগ্যের চাকা ঘুরতে চলেছে।
প্রসঙ্গত, এদিনও মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসকদের কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার আবেদনও করেন। তিনি বলেন, “আপনারা দয়া করে কাজে ফিরুন। আমরা আপনাদের তিনটে দাবি মেনে নিয়েছি। দায়বদ্ধতা দুই পক্ষেরই থাকে। অনেক মানুষ মারা যাচ্ছেন। মানুষের কাছে ডাক্তার ভগবান। তাই আপনারা প্লিজ কাজে ফিরুন।” অন্যদিকে জুনিয়র ডাক্তাররা এদিন জানান, যতক্ষণ না প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন এবং সরকারি অর্ডার হবে ততদিন কর্মবিরতি উঠছে না। চিকিৎসক অনিকেত মাহাতো জানান, ‘আমাদের দাবি কেন ন্যায়সঙ্গত, সেটা মুখ্যমন্ত্রীকে পরিষ্কার জানানো হয়। তিনি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেটা যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে বলতে পারি আলোচনা কিছুটা সদর্থক হয়েছে।’