শ্বেতা মিত্র, কলকাতাঃ বাংলায় শিক্ষক নিয়োগের জট যেন খুলতেই চাইছে না। বরং যত সময়ে এগোচ্ছে ততই বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থা বড়সড় প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়াচ্ছে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটল না। গত আগস্ট মাসেই কলকাতা হাইকোর্টের তরফে রায় দেওয়া হয়েছিল যে উচ্চ প্রাথমিকে নতুন করে ১৪,০০০ -রও বেশি শিক্ষককে নতুন করে নিয়োগ করতে হবে। এর জন্য যাবতীয় মেধা তালিকা, কাউন্সিলিং-র জন্য এসএসসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু এবার হাইকোর্টের রায়কে এবার চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন বহু চাকরি প্রার্থী। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন।
ফের প্রশ্নের মুখে ১৪,০০০-রও বেশি চাকরি
গত আগস্ট মাসে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগের ক্ষেত্রে বড়সড় একটা জট কেটেছিল বলে মনে হয়। নতুন করে মেধা তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হ স্কুল সার্ভিস কমিশনকে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। হাইকোর্টের নির্দেশে এবার এক ধাক্কায় ১৪ হাজার ৫২টি শূন্যপদে নিয়োগে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। করতে হবে কাউন্সিলিং। দীর্ঘ ৭ বছর ধরে লড়াই করার পর একটু হলেও মুখে হাসি ফুটেছিল সকলের। কিন্তু কিছুদিনের যেতে না যেতেই সেই হাসিও সকলের মুখ থেকে এবার যেন উবে গেল বলে মনে হচ্ছে। কারণ এবার সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হল মামলা।
রাজীব ব্রহ্ম-সহ কয়েক জন চাকরিপ্রার্থীর বক্তব্য, ১৪ হাজারের বেশি শূন্যপদে নিয়োগের যে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট ওই নির্দেশ সংরক্ষণ নীতি বিরোধী। চলতি সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে বলে খবর।
সুপ্রিম কোর্টে মামলা
২০১৫ সালে আপার প্রাইমারির এই পরীক্ষা হয়েছিল। সেইসময়ে পরীক্ষা দিয়েছিলেন ৫ লক্ষ পরীক্ষার্থী। পাশ করেছিলেন ২ লক্ষ ২৮ হাজার ৬৬০ পরীক্ষার্থী। এমনি তাঁদের মধ্যে প্রশিক্ষিত ছিলেন ১ লক্ষ ৮ হাজার ৩৮০ জন। এরপর মেধাতালিকা প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালের ৪ অক্টোবর। তবে সকলের কপাল এতটাই খারাপ যে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সেই তালিকা প্রকাশ পাওয়ার পরেও ২০২০ সালে ১১ ডিসেম্বর সেই তালিকা বাতিল হয়ে যায়। এরপর মামলা চায় হাইকোর্টে। এরপর থেকে সেই যে চাকরির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হল তা এখনও চলছে।
২০২০-র পর ২০২১ সালে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নিয়োগ SSC-কে নিয়োগ করতে বলে কলকাতা হাইকোর্ট। ৪ জানুয়ারি-২০ জানুয়ারি পর্যন্ত অনলাইন ভেরিফিকেশন চলে। ওই বছরেই ২১ জুন ইন্টারভিউ তালিকা প্রকাশ পায়। তাতে নাম ছিল ১৪ হাজার ৫২ জনের। কিন্তু পরীক্ষার্থী অভিযোগ করেন, তাঁদের নামই নাকি তালিকায় নেই। ফলে ফের কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। পরবর্তী কালে বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন নিয়োগে স্থগিতাদেশ দেয়, কিন্তু গ্রিভেন্স নেওয়ার নির্দেশ বহাল রাখে। এরপর নানা টালবনাহানার পর ২০২৩ সালের ১৬ অগস্ট আবার মেধাতালিকা প্রকাশ করে স্কুল সার্ভিস কমিশন। তাতে ১৩ হাজার ৩৩৩ জনের নাম থাকে। ১৭ সেপ্টেম্বর আবার কাউন্সিলিং হয়। সেই কাউন্সিলিংয়ের পর ডাক পান ৮ হাজার ৯৪৫ জন পরীক্ষার্থী। যদিও তারপরেও অনেক ত্রুটি রয়ে গেছে বলে দাবি চাকরি প্রার্থীদের। ফলে এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন তাঁরা।