দেবপ্রসাদ মুখার্জী: ভারতীয় রেল প্রযুক্তির উন্নতিসাধনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে ট্রেনের গতি বৃদ্ধি ছিল একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। আর রেলের অন্যতম সংযোজন ছিল তেজস এক্সপ্রেস। ট্রেনটি দেশের প্রথম সেমি-হাইস্পিড, যা সম্পূর্ণভাবে এয়ার-কন্ডিশন্ড। তেজস এক্সপ্রেস ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে। যদিও বর্তমানে ভারতীয় রেলের রুটের সীমাবদ্ধতার কারণে এটি সাধারণত ১৩০ থেকে ১৬০ কিমি প্রতি ঘণ্টা গতিতে চলে। তেজস ট্রেনে উন্নতমানের আসন ব্যবস্থা, বিনোদনের জন্য ব্যক্তিগত স্ক্রিন, মোবাইল চার্জিং পোর্ট, এলইডি লাইটিং, এবং পরিষ্কার টয়লেট ব্যবস্থা রয়েছে।
তবে এবার তেজস এক্সপ্রেস চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হল ভারতীয় রেলকে। ভারতীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তেজস ট্রেন পরিচালনার দায়িত্ব বেসরকারি অপারেটরদের দিয়েছিল। বর্তমানে দিল্লি থেকে লখনউ এবং মুম্বাই থেকে আহমেদাবাদ রুটে তেজস ট্রেন চালানো হচ্ছিল। তবে IRCTC-র দেওয়া ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, এই দুই ট্রেনই ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। আর সেই কারণে এবার এই সেমি হাইস্পিড ট্রেন বন্ধ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে রেল।
তেজস এক্সপ্রেস চালিয়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি
IRCTC প্রদত্ত ২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দিল্লি থেকে লখনউ হয়ে কানপুর সেন্ট্রাল অবধি যাতায়াত করে তেজস এক্সপ্রেস ট্রেনটি ২৭.৫২ কোটি টাকার ক্ষতিতে চলছে। তিন বছরে দুটি তেজস ট্রেনের ক্ষতি ৬২.৮৮ কোটি টাকায় পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। আইআরসিটিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, করোনাকালীন দীর্ঘ সময় ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলেও রেলওয়েকে ভাড়া দিতে হয়েছিল। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও সেভাবে যাত্রী আকর্ষণ করতে পারেনি তেজস। আর এই ক্ষতির কারণে ট্রেনটির সাপ্তাহিক ফেরা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুরুতে সপ্তাহে ৬ দিন চললেও, পরে তেজস এক্সপ্রেস সপ্তাহে ৪ দিন চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কেন এই বিপুল ক্ষতির মুখোমুখি তেজস এক্সপ্রেস?
তেজস এক্সপ্রেস ট্রেন চালানোর কারণে এই বিপুল আর্থিক ক্ষতির অন্যতম কারণ হল যাত্রী না পাওয়া। সূত্র বলছে, এই ট্রেনগুলিতে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০টি সিট খালি পড়ে থাকে। আর এই সিট খালি থাকার কারণ হলো তেজস এক্সপ্রেসের আগে রাজধানী এক্সপ্রেস ও শতাব্দী এক্সপ্রেস ট্রেনের চলাচল। এই ট্রেনগুলির ভাড়া তেজসের চেয়ে কম হলেও পরিষেবা তেজসের মতোই। এই কারণে যাত্রীরা তেজসকে দ্বিতীয় বিকল্প হিসেবে ধরে রাখেন।
৫ বার বন্ধ হয়েছিল তেজস এক্সপ্রেসের যাত্রা
করোনা পরবর্তী সময়ে তেজস এক্সপ্রেস ট্রেনের সংখ্যা কমানোও হয়েছিল। যাত্রী কম থাকার কারণে ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ট্রেনগুলি ৫ বার অস্থায়ীভাবে বন্ধ করা হয়েছিল। তবে ২০১৯-২০ সালে লখনউ-নয়াদিল্লি রুটে তেজস এক্সপ্রেস থেকে ২.৩৩ কোটি টাকা লাভ হয়েছিল। কিন্তু এর পর ২০২০-২১ সালে ১৬.৬৯ কোটি টাকা এবং ২০২১-২২ সালে ৮.৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয় এই ট্রেন থেকে।