ইন্ডিয়া হুড ডেস্কঃ ‘রাতের বেলা দুপুর যদি হয়, দুপুরবেলা রাত হবেনা কেন।’ রবি ঠাকুরের কবিতার এই লাইন আমাদের সকলকে দিন ও রাতের নিয়মের বাইরে কিছু ভাবতে শেখায়। কিন্তু আদৌ কি তেমনটা হয়? আলবাত হয়। নিশীথ সূর্যের দেশগুলিতে বছরের কয়েকমাস রাতেও সূর্য ওঠে। হ্যাঁ, আমরা সুইডেন, আলাস্কা, নরওয়ে, আইসল্যান্ড, ফিনল্যান্ড-এর মত দেশগুলির কথা বলছি। তবে এগুলি প্রাকৃতিক ঘটনার কারণে হয়। কিন্তু এবার কৃত্রিম উপায়ে রাতের বেলাতেও সূর্যের আলো পাওয়া যাবে।
সম্প্রতি একটি নতুন ধারণা নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে গোটা বিশ্ব। কারণ এবার মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠিয়ে সেগুলির সাহায্যে সূর্যের রশ্মি সংগ্রহ করে তা পৃথিবীতে বিক্রি করার একটা পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। এই উদ্যোগের পেছনে কাজ করছে Reflect Orbital নামে একটি কোম্পানি। এই কোম্পানি মহাকাশে বিশেষ ধরনের স্যাটেলাইট পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। ওই স্যাটেলাইট থেকে রাতের বেলায় সূর্যরশ্মি কিনতে পারবেন যে কেউ। অসম্ভব মনে হলেও এই বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে কাজ অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছে।
রাতের বেলায় সূর্যের আলো- বৈজ্ঞানিক উপায়ে সম্ভব?
Reflect Orbital নামের ওই কোম্পানি এবার মহাকাশে মাইলার মিরর যুক্ত স্যাটেলাইট পাঠাবে। এই স্যাটেলাইট থেকেই প্রতিফলিত হয়ে সূর্যরশ্মি এসে পৌঁছাবে পৃথিবীতে। মাইলার মিরর হল একধরনের অত্যন্ত পাতলা ও হালকা প্রতিফলক পদার্থ, যেটি মূলত মাইলার পলিমার দ্বারা তৈরি করা হয়। এই মাইলার মিরর সূর্যরশ্মিকে প্রতিফলিত করতে পারে। তাই মহাকাশে পাঠানো স্যাটেলাইটে আয়না হিসেবে এটির ব্যবহার করা হয়। বিজ্ঞানসম্মতভাবে, মহাকাশ থেকে সূর্যের রশ্মি পৃথিবীতে আনার পদ্ধতিটি বেশ জটিল। কারণ, স্যাটেলাইটটি সূর্যের রশ্মি সংগ্রহ করে তা সরাসরি পৃথিবীতে নির্দিষ্ট জায়গায় প্রতিফলিত করবে কিনা, তা সময় বলবে। তবে এই প্রক্রিয়ায় বড় বাধা হতে পারে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল। কারণ বায়ুমণ্ডলের প্রভাবে সূর্যের রশ্মির তীব্রতা ও কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।
রাতের বেলায় সূর্যের রশ্মি অর্ডার দিয়ে কেনা যাবে
সূর্যের রশ্মি কেনাবেচা করা একটি নতুন ধারণা। তাই চ্যালেঞ্জিং হলেও এই ধারণা বেশ আকর্ষণীয়। তবে, এর বাস্তবায়ন ঘটানোর জন্য বেশ কিছু প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক সমস্যা রয়েছে। প্রথমত, মিররগুলি নির্ভুলভাবে পরিচালনা করা এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্যে রশ্মি প্রতিফলিত করা খুবই কঠিন। এছাড়া, সূর্যের রশ্মি থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ বা তাপের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করাও একটি বড় প্রশ্ন। তবে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের সহাবস্থান ঘটলে কি’না সম্ভব হয়! তাই এই প্রোজেক্ট নিয়ে আশাবাদী গোটা বিশ্ব।
আর কি কি কাজে ব্যবহৃত হবে প্রতিফলিত সূর্যরশ্মি?
(১) যদি এই প্রযুক্তি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে মহাকাশ থেকে বিদ্যুৎ বা তাপ সরবরাহের মাধ্যমে একটি নতুন শিল্প গড়ে উঠতে পারে।
(২) সূর্যের রশ্মি কেনাবেচা আগামী দিনে সব দেশের কাছে একটি বড় ব্যবসা হতে পারে।
(৩) এই প্রকল্পটি সফল হলে যেসব জায়গায় যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছায় না বা কম পৌঁছায়, সেখানে কৃত্রিমভাবে আলো সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
(৪) কৃষি ক্ষেত্রে সূর্যের আলো প্রয়োগ করে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো যেতে পারে।
(৫) বড় বড় শহরগুলিতে অতিরিক্ত আলো সরবরাহ করা যেতে পারে।