নয়া দিল্লিঃ ভারতে দিন দিন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচারের ঘটনা বাড়ছে। বেশ কয়েকবছর আগে বলিউডের ছবি ‘রান’-এ এই বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছিল। সেই সিনেমায় দেখানো হয় এক যুবকের গল্প। ওই যুবক চাকরির খোঁজে দিল্লি আসে এবং দিল্লিতে সে কিডনি পাচার চক্রের ফাঁদে পড়ে। সম্প্রতি দাখিল হওয়া একটি চার্জশিটে একইরকমের একটি ঘটনার উল্লেখ পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি, ভারতে এসে কিডনি পাচারকারী চক্রের শিকার হয়েছেন তিন বাংলাদেশি নাগরিক। আর এই ঘটনার বিরুদ্ধে তাঁরা ১৬৪ ধারার অধীনে পুলিশে অভিযোগ জানান। অভিযোগ, চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁদের তিনজনকে প্রথমে ভারতে নিয়ে আসা হয়। এরপর ডাক্তারি পরীক্ষার নাম করে তাঁদের কিডনি বের করে নেওয়া হয়। ৪৮ ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরে পেয়ে তাঁরা বুঝতে পারেন যা তাঁদের তার কিডনি বের করে নেওয়া হয়েছে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে মাত্র ৪ লাখ টাকা দিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগও করেছেন তিন বাংলাদেশি।
চাকরির সন্ধানে আসা বাংলাদেশি তরুণীকে কিডনি বিক্রির কুপ্রস্তাব
সম্প্রতি, সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এক বছর ৩০-এর বাংলাদেশি তরুণী বলেন, “এক অগ্নিকাণ্ডে আমার পোশাকের ব্যবসা যখন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তখন আমি একটি এনজিও থেকে ৮ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। ৩ লাখ টাকা শোধ করেছিলাম, কিন্তু বাকি ঋণ শোধ করতে পারিনি। সেই সময় আমার এক বন্ধু পরামর্শ নিয়ে চাকরির খোঁজে পাসপোর্ট ও মেডিকেল ভিসার ব্যবস্থা করে ভারতে আসি। এখানে পৌঁছানোর পর আমাকে বলা হয়, কোনো চাকরি নেই। কিন্তু কিছু লোক আমাকে টাকার জন্য আমার কিডনি বিক্রি করার জন্য চাপ দেয়। আমি প্রত্যাখ্যান করি, কিন্তু তারা আমার পাসপোর্ট এবং ভিসা আটকে রাখে। তারা হুমকি দেয় যে আমি তাদের কথা না মানলে তারা আমাকে ভারত থেকে ফিরতে দেবে না।”
অজ্ঞান করে কিডনি বের করে নেওয়া হল বাংলাদেশি যুবকের
একইভাবে, বছর ৩৫ -এর এক বাংলাদেশি যুবককে চাকরির আশ্বাস দিয়ে গত ২ ফেব্রুয়ারি তাঁকে ভারতে নিয়ে আসেন তাসকিন নামে এক ব্যক্তি। ওই যুবক বলেন, “রাসেল ও মোহাম্মদ রোকন নামে দুইজন এয়ারপোর্টে আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তার সাথে হোটেল যশোলার রামপাল-এ যাই। এরপর আমাকে বলা হয়েছিল যে ভারতীয় নিয়ম অনুযায়ী চাকরি পাওয়ার আগে আমাকে মেডিকেল টেস্ট করাতে হবে। এবার আমার উপর রক্ত পরীক্ষা ও ইসিজি সহ ১৫-২০ টি টেস্ট করা হয়েছিল। ২ এপ্রিল আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ৩ এপ্রিল, আমাকে একটি ইনজেকশন দেওয়া হয় এবং আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। ৫ এপ্রিল জ্ঞান ফেরার পর, আমি আমার পেটে একটি দাগ এবং সেলাই দেখতে পাই। আমাকে বলা হয়েছিল যে আমার অস্ত্রোপচার হয়েছে। গত ৬ এপ্রিল রাসেল ও তার সহকর্মী সুমন আমাকে যশোলার একটি হোটেলে পাঠায়। রাসেল আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিবরণ নিয়ে তাতে ৪ লাখ টাকা জমা দিলেও আমার পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করে। আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। রাসেল আমাকে বলে যে আমি আর চাকরি পাব না এবং আমাকে বাংলাদেশে ফিরে যেতে বলা হয়েছিল।”
৬ দিনে ৪৯ টিউব রক্ত নিয়ে কী করা হল বাংলাদেশি যুবকের সঙ্গে?
একই ঘটনা ঘটেছে তৃতীয় বাংলাদেশির সঙ্গে। তিনি বলেন, “প্রশিক্ষণ ও চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাকে ভারতে আনা হয়। আমাকে এরপর মেডিকেল টেস্ট করতে বলা হয়। ৬ দিনে তার কাছ থেকে ৪৯ টিউব রক্ত নেওয়া হয়। এরপর একদিন আমাকে এমন কিছু দেওয়া হয়েছিল যা আমাকে দুর্বল করে তুলেছিল। এবার কখন আমি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম নিজেই জানিনা। জ্ঞান ফিরলে বুঝতে পারি যে আমার একটি কিডনি নেই। আমাকে বলা হয়েছিল আমি কোনো সমস্যা ছাড়াই একটি কিডনি নিয়ে বাঁচতে পারব। আমাকে সাড়ে চার লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।
মামলার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ
তিনজন বাংলাদেশিই তাদের এই বেদনাদায়ক গল্প নিয়ে বাংলাদেশে ফিরেছেন। যদিও এই তিনটি ভিন্ন ঘটনার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে ভারতে। পুলিশ মামলায় চার্জশিট দাখিল করেছে। শীঘ্রই এই কিডনি অনাচার চক্রের বিচার ও তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।