দেবপ্রসাদ মুখার্জী: কয়েকমাস আগেই ইউরোপের দুই গুরুত্বপূর্ণ দেশ- ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডে বামপন্থী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। আর এবার বামপন্থী সরকার গঠন হতে চলেছে এশিয়াতেও। ভারতের খুব কাছের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কায় সরকার গঠন করতে চলেছে বামপন্থী দল পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট এবং ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার। আর শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট হতে চলেছেন অনুরা কুমারা দিসানায়েক।
প্রতিবেশী দেশের এই ঘটনার সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে ভারতের উপর। বিশেষ করে আদানি গোষ্ঠীর ব্যবসায় বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে শ্রীলঙ্কার নবনির্বাচিত বাম সরকার। কারণ, অনুরা কুমারা দিসানায়েককে চিনপন্থী নেতা বলে মনে করা হয় বিভিন্ন কারণে। সেই সঙ্গে নির্বাচনের আগে তিনি আদানি গোষ্ঠীর প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। তাই শ্রীলঙ্কার বাম উত্থান কি ভারতের জন্য অশনি সংকেত হতে পারে? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিসানায়েক কে?
অনুরা কুমারা দিসানায়েক একজন বামপন্থী রাজনীতিবিদ এবং বামপন্থী দল পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট এবং ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার-এর নেতা। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি শ্রীলঙ্কার বিজয়ী দলের নেতৃত্বে এসেছেন। তাঁর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির নেপথ্যে রয়েছে তাঁর দুর্নীতি-বিরোধী মনোভাব, সুশাসনের প্রতিশ্রুতি। শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটের পর পরিবর্তনের দাবিতে আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন এই বাম নেতা। আর সেই কারণে এবার তিনি শ্রীলঙ্কার প্রথম বামপন্থী নেতা হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন।
বিপুল ভোটে জিতে ক্ষমতায় এল বাম সরকার
২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে, দিসানায়েক প্রায় ৫২ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। শ্রীলঙ্কার ১৭ মিলিয়ন ভোটারের মধ্যে তিনি উল্লেখযোগ্য সমর্থন পান। নির্বাচনে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হলেও, ফলাফল ঘোষণা করা পর্যন্ত দেশব্যাপী কারফিউ জারি করা হয়েছিল। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সাজিথ প্রেমদাসা যিনি পেয়েছেন মাত্র ২৩ শতাংশ ভোট এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, যিনি মাত্র ১৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।
অনুরা কুমারা দিসানায়েক-কে কেন চিনপন্থী মনে করা হয়?
দিসানায়েক তাঁর নির্বাচনী প্রচারে বারবার চিনের সাথে সম্পর্ক উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন। এছাড়াও ফিনি ভারতের বাণিজ্যিক প্রকল্পগুলির সমালোচনা করতেও ছাড়েননি। বিশেষ করে ভারতের আদানি গ্রুপের বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে তাঁর আপত্তি রয়েছে। তিনি ভারতের এই প্রকল্পটি বাতিল করার ইঙ্গিতও দিয়েছেন। এটি ভবিষ্যতে ভারত ও শ্রীলঙ্কার কূটনৈতিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে।
অনুরা কুমারা দিসানায়েক কি আদানির বায়ু প্রকল্প বাতিল করবেন?
অনুরা কুমারা দিসানায়েক তাঁর নির্বাচনী প্রচারে ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি ভারতের আদানি গ্রুপের বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাতিল করতে পারেন। কারণ, তাঁর মতে এটি দেশের শক্তির সঞ্চয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। সেই কারণে অনুরা কুমারা দিসানায়েক বিদেশি কোম্পানির হাতে জাতীয় সম্পদ তুলে দেওয়ার বিপক্ষে মত দিতে পারেন বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।