৫ লাখ না দিলে বন্ধ পুজো, বাংলাদেশের হিন্দুদের হুমকি

Koushik Dutta

Published on:

৫ লাখ না দিলে বন্ধ পুজো, বাংলাদেশের হিন্দুদের হুমকি

দেবপ্রসাদ মুখার্জী: হাতে আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ। তারপরেই বাঙালি মেতে উঠবে দুর্গোৎসবে। গ্রাম বাংলা থেকে শহরতলি- রাজ্যের সব জায়গাতেই দুর্গাপুজো হয়। তবে শুধু এপার বাংলা নয়, বাংলাদেশের হিন্দু সমাজও সেই দেশে দুর্গোৎসব পালন করেন। কিন্তু এবার বাংলাদেশে দুর্গাপুজো নিয়ে এল এক বিরাট আপডেট। দুর্গাপুজো করার জন্য ৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে হুমকি চিঠি এল মন্দির ও ক্লাবে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলায় দুর্গাপুজোর আয়োজনকে কেন্দ্র করে সেখানের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এই এলাকার একাধিক মন্দির ও পুজো কমিটির কাছে উড়ো চিঠি পাঠিয়ে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা চাওয়া হয়েছে। চিঠিতে হুমকি দেওয়া হয়েছে, যদি তারা এই চাঁদার টাকা না দেয়, তবে তাদের দশা হবে ‘হানিফ প্রজেক্টের’ মতো। এই হুমকিতে আরো জানানো হয়েছে যে, পুলিশ বা সাংবাদিকদের এই হুমকি চিঠির বিষয়ে জানালে প্রাণনাশ করা হবে।

For Experts Recommendation Join Now

পুজোর আগেই মন্দিরে মন্দিরে হুমকি চিঠি

সূত্রের খবর, গত বুধবার থেকে বিভিন্ন মন্দিরে এই ধরনের চিঠি আসা শুরু হয়। চিঠিগুলি কম্পিউটারে টাইপ করে আংশিক হলুদ কাগজে প্রিন্ট করা হয়েছে। আর এইসব চিঠিতে স্পষ্টভাবে ৫ লাখ টাকা চাঁদা চাওয়ার কথা বলা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, চিঠিগুলো একই ধরনের এবং একই বিষয়বস্তু নিয়ে লেখা হয়েছে। আর এই হুমকি চিঠিকে ঘিরে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে বাংলাদেশি হিন্দুদের মধ্যে।

চিঠিতে ‘হানিফ প্রজেক্ট’-এর উল্লেখ

মন্দিরে পাঠানো এইসব হুমকি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নির্ধারিত টাকা না দিলে হানিফ প্রজেক্টের মতো তাঁদেরও বিপদ ঘটবে। আসলে এখানে ‘হানিফ প্রজেক্ট’ বলতে বোঝানো হচ্ছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের একটি চিংড়ি চাষ প্রকল্প, যা ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগের পতনের পর ব্যাপক লুটপাটের শিকার হয়েছিল।

বাংলাদেশে বন্ধ হবে দুর্গাপুজো?

এ ধরনের হুমকি চিঠি পাওয়ার পর দাকোপের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। মন্দির ও পুজো কমিটিগুলো একটি সভা আয়োজন করে, যেখানে বেশিরভাগ সদস্য এবারের পুজো স্থগিত করার পক্ষে মত দেন। কামারখোলা সর্বজনীন দুর্গাপুজো উদ্‌যাপন কমিটির সভাপতি শেখর চন্দ্র গোলদার বলেন, “এবার জাঁকজমকপূর্ণ পুজোর পরিবর্তে ছোট করে পুজো করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, কিন্তু চিঠি পাওয়ার পর বেশিরভাগ সদস্য পুজো বন্ধ রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন।” এছাড়া, কিছু মন্দির কমিটি পূজা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তবে তারা রাত জেগে পাহারার ব্যবস্থা করেছে এবং প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছে।

সুরক্ষা বৃদ্ধিতে তৎপর পুলিশ ও প্রশাসন

ঘটনার পর দাকোপ থানায় চারটি পুজো কমিটি অভিযোগ দায়ের করেছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চিঠি পাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে, এবং পুলিশ ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। সেনাবাহিনীসহ থানা থেকে নিয়মিত টহল জোরদার করা হয়েছে এবং এলাকায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। স্থানীয় গ্রাম পুলিশ ও ইউনিয়নভিত্তিক পুলিশ কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক টহলের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। নিরাপত্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রশাসন চাঁদাবাজির এই চক্রকে শনাক্ত করার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

Share This ➥
X