ঢাকাঃ সরকারি কোটা সিস্টেমের বিরুদ্ধে আন্দোলন, সেই থেকে গণঅভ্যুত্থান; গত কয়েকমাসে অনেক ঘটনার সাক্ষী থেকেছে বাংলাদেশ। সেইসঙ্গে এই কয়েকমাসে বাংলাদেশের অনেক কিছুর রদবদল ঘটে গেছে। বাংলাদেশে মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারও গঠিত হয়েছে। আর এই সরকারের সাম্প্রতিক একটি পদক্ষেপ ভারতীয় উপমহাদেশে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। ভারত সহ অনেক দেশই এখন বিষয়টিকে নিয়ে চিন্তায় পড়েছে।
সম্প্রতি, বাংলাদেশ সরকার আল কায়দা-সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাস গোষ্ঠী আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বা ABT-র প্রধান জসিমুদ্দিন রহমানিকে মুক্তি দিয়েছে। ২০১৩ সালে একজন ব্লগার হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে রাহমানিকে জেলে পাঠানো হয়েছিল। তিনি গত ১১ বছর জেলে থাকলেও গত মাসে ২৬ শে আগস্ট তিনি প্যারোলে মুক্তি পান। রহমানির সন্ত্রাসী ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। রহমানির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ, খুন এবং ব্যাঙ্ক ডাকাতির অভিযোগও রয়েছে। তাই তাঁর মুক্তি নিয়ে চিন্তা বাড়ছে।
ABT ও জসিমুদ্দিন রহমানির কার্যকলাপ
কমনওয়েলথ ইউনিয়নের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ABT নামের এই সংগঠন তৈরি হয় ২০১৩ সালে। এই সংগঠন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আল-কায়দার উগ্র মতাদর্শ বৃদ্ধিতে কাজ করেছে। এমনকি, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে পাঁচজন ব্লগার এবং একজন অধ্যাপককে হত্যার জন্য এই সংগঠনকে দায়ী বলে মনে করা হয়। ২০১৪ সালে, তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকার ABT-কে অবৈধ ঘোষণা করেছিল। এরপর আদালত রাহমানিকে কারাবাসের সাজা দেন। এরপর ABT খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু রাহমানির মুক্তি থেকে এটা স্পষ্ট যে ইউনূস সরকার মৌলবাদী দলগুলোর প্রতি নমনীয় মনোভাব পোষণ করছে।
ভারতের জন্য কতটা বিপজ্জনক ABT?
সূত্রের খবর, রহমানি আগেও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁদের প্রভাব বৃদ্ধির করার চেষ্টা করেছে। এমন পরিস্থিতিতে তাঁর মুক্তি ভারতের জন্য বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। গত কয়েক বছরে, ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে বেশ কয়েকজন ABT কর্মী গ্রেফতারও হয়েছেন। ২০২৪ সালের মে মাসে, আসাম পুলিশ গুয়াহাটি রেলওয়ে স্টেশনে ২ জন ABT সন্ত্রাসবাদীকে ধরেছিল। একাধিক রিপোর্ট ইঙ্গিত করে যে ABT উত্তর-পূর্ব ভারতে সন্ত্রাসী অভিযানের পরিকল্পনা করার জন্য লস্কর-ই-তৈবা-র মতো পাকিস্তানি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির সাথে যোগাযোগ করেছে।
বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্তে বাড়বে আতঙ্ক
গত কয়েকদিনে একইসঙ্গে ভারতে অপারেশনের প্রধান ইকরামুল হক ওরফে আবু তালহা সহ ৫০০ বন্দীর পালানোর সঙ্গে রাহমানির মুক্তি – এই জোড়া ঘটনা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। আগে শেখ হাসিনার সরকার মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিল। বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য কিছুটা স্থিতিশীল পরিবেশও তৈরি করেছিল। কিন্তু, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপগুলি যথেষ্ট উদ্বেগজনক। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পরিস্থিতির দিকে ভারত ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংস্থার নজর দেওয়া দরকার।