নয়া দিল্লিঃ দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নামিবিয়ার মানুষজন বর্তমানে এক ভয়াবহ খাদ্যসংকটের মুখোমুখি হয়েছে। এই চরম খাদ্য সংকটের মূলে রয়েছে সেই দেশের দুর্ভিক্ষ। নামিবিয়া-র বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে এই দুর্ভিক্ষ। ফলস্বরূপ অনেকে সেখানে রোজ খাবারটুকুও খেতে পারছেন না। দেশবাসীর এই দুর্দশা দূর কেটে নামিবিয়া সরকার একটি চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়ে।
সম্প্রতি, নামিবিয়া সরকার ৭২৩ টি বন্য প্রাণী হত্যা করে সেগুলিকে দেশবাসীর খাবারের জোগানের জন্য ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জেব্রা, ইমপালা, জলহস্তী সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতির প্রাণীকে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে ইতিমধ্যে। এই খবর সামনে আসতেই অনেকেই বন্যপ্রাণ রক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যদিও অনেকের মতে, মানুষের বেঁচে থাকার জন্য বন্যপ্রাণী হত্যা নতুন কোনও ঘটনা নয়।
দেশবাসীর খিদে মেটাতে পশু-হত্যা
নামিবিয়া সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, খাদ্যসংকট কমানোর জন্য এই প্রাণীগুলিকে হত্যা করা অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশটির অধিকাংশ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন এবং তাদের খাদ্য সরবরাহ অত্যন্ত সীমিত হয়ে পড়েছে। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে বন্যপ্রাণী হত্যা করে তাদের মাংস বিতরণ করাকে সরকারের পক্ষ থেকে একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। জানা গেছে, সেই দেশে এবার ৩০০ টি জেব্রা, ৩০ টি জলহস্তী, ৫০ টি ইমপালা, ৭০ টি মোষ, ১০০ টি ব্লু ওয়াইল্ড বিস্ট, ১০০ ইল্যান্ড সহ অনেক প্রাণীকে হত্যা করা হবে।
পশু-হত্যার সিদ্ধান্তে বিরোধিতা বিশ্বজুড়ে
নামিবিয়া এই সিদ্ধান্তে দেশে-বিদেশে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে। পরিবেশবিদ এবং প্রাণী অধিকার রক্ষাকারী সংস্থাগুলি এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করছে। তাঁদের মতে, সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে শুধুমাত্র বন্যপ্রাণীর সংখ্যা কমে যাবে না, বরং এই প্রাণীগুলির দ্বারা সৃষ্ট প্রাকৃতিক বাসস্থান এবং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যও নষ্ট করবে। নামিবিয়ার বেশ কিছু অংশে এই প্রাণীগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়। সেই কারণে এইসব প্রাণীর উপস্থিতি পর্যটন শিল্পের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশবিদদের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করা হলে, ভবিষ্যতে আরও বড় সংকটের মুখোমুখি হতে হতে হবে দেশটিকে।
সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার
নামিবিয়ার সরকার এই সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে জানিয়েছে যে, দেশের জনগণের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশের বর্তমান খাদ্য সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত একটি কার্যকরী উপায় হতে পারে। সরকারের তরফে আরও জানানো হয়েছে যে, এই প্রাণীদের হত্যার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রিত এবং আইনানুগভাবে সম্পন্ন হবে।