শূন্য থেকে শুরু, একদা দু’বেলা পেট পুরে খেতে না পারা রেণুকার আজ ৪০ কোটির কোম্পানি

ভারতের আইটি রাজধানী বেঙ্গালুরুর কাছে অবস্থিত গোপাসান্দ্রা নামের একটি গ্রামের বাসিন্দা রেণুকা আরাধ্য’র গল্পটি সংগ্রামে পূর্ণ। অত্যন্ত দরিদ্র পুরোহিত পরিবারে জন্ম নেওয়া রেণুকা জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। বাড়ির আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে পড়াশোনা শেষ করার জন্য তাকে অন্যের বাড়িতে চাকরের কাজ করতে হয়েছিল। রেণুকা দশম শ্রেণী শেষ করার পর এক বৃদ্ধর বাড়িতে তার সেবার কাজ শুরু করেন। আর একই সময়ে তিনি পাশের মন্দিরে পুরোহিতের কাজ করতেন। এভাবে চলল প্রায় এক বছর।

   

এরপর আরও পড়াশোনা শেষ করার উদ্দেশ্যে বাবা রেণুকাকে শহরের একটি আশ্রমে ভর্তি করিয়ে দেন। ওই আশ্রমে খাবার পাওয়া যেত মাত্র দুবার সকাল ও সন্ধ্যা ৮টায়। সারাদিন ক্ষুধার জ্বালায় রেণুকা ঠিকমতো পড়াশুনাও করতে পারেনি। ফলে সে পরীক্ষায় ফেল করে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়। এরপর তার বাবাও প্রয়াত হন, অর্থাৎ সব দায়িত্ব রেণুকার মাথায়।

অনেক খোঁজাখুঁজির পর পাশের একটি কারখানায় কাজ পান রেণুকা। এক বছর কাজ করার পর তিনি প্লাস্টিক এবং বরফ মেকার কোম্পানিতে কাজ করেন। এরপর একটি ব্যাগের কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। কয়েক বছর কাজ করার পর নিজের মতো করে একটি ব্যবসা শুরু করার কথা ভাবলেন রেণুকা। তিনি স্যুটকেস কভারের ব্যবসা শুরু করেছিলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তার ৩০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছিল। এরপর সেকিউরিটি গার্ড হিসেবে কাজ শুরু করেন।

কিন্তু জীবনে বড় কিছু করার তাগিদ রেণুকাকে এই গার্ডের চাকরি ছাড়তে বাধ্য করে। শেষ পর্যন্ত, তিনি গাড়ি চালানো শেখার সিদ্ধান্ত নেন। তার এক আত্মীয়ের কাছ থেকে কিছু টাকা ঋণ নিয়ে রেণুকা গাড়ি চালানো শিখে কাজ শুরু করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাঁকে সেখানেও পিছু করে, গাড়ি পার্কিংয়ের সময় রেণুকার দুর্ঘটনা হয়। এরপরেও হাল ছাড়েননি রেণুকা। দিনরাত ড্রাইভিং অনুশীলন করে তিনি হয়ে ওঠেন একজন সফল চালক। কিছুদিন পর একটা বড় ট্রাভেল এজেন্সিতে চালকের কাজ শুরু করেন। সেখানে তিনি বিদেশি পর্যটকদের ট্যুর হিসেবে কাজ করতেন এবং ভালো টিপসও পেতেন।

প্রায় ৪ বছর কাজ করার পর রেণুকা তার নিজস্ব ভ্রমণ সংস্থা খোলার সিদ্ধান্ত নেন। নিজের সঞ্চয় ও ব্যাংক ঋণের সাহায্যে তিনি প্রথম গাড়ি কিনে ‘সিটি সাফারি’ নামে একটি কোম্পানি শুরু করেন। এক বছর পর তিনি আরেকটি গাড়ি কেনেন। সেই সময় একটি ক্যাব কোম্পানির অবস্থা খারাপ যাচ্ছিল, এবং তাঁরা তাদের ব্যবসা বিক্রি করতে চেয়েছিল। রেণুকা প্রায় ছয় লাখ টাকায় কোম্পানিটি কিনেছিলেন যাদের কাছে ৩৫টি ক্যাব ছিল।

renuka

আসল সাফল্যের গল্প শুরু হয়েছিল যখন অ্যামাজন ইন্ডিয়া তাকে নিজের প্রচারের জন্য বেছে নিয়েছিল। ধীরে ধীরে ওয়ালমার্ট, জেনারেল মোটরসের মতো বড় কোম্পানি তার সঙ্গে চুক্তি করতে শুরু করে। সময়ে সময়ে এগিয়ে চলতে চলতে আজ রেণুকার কোম্পানির টার্নওভার ৪০ কোটিরও বেশি এবং এটি ১৫০ জনেরও বেশি লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে। নারীর ক্ষমতায়নের পরিপ্রেক্ষিতে রেণুকা মহিলাদের ড্রাইভার হওয়ার জন্য উৎসাহিত করছেন এবং তাদের নিজস্ব গাড়ি কিনতে ৫০ হাজার পর্যন্ত আর্থিকভাবে সাহায্য করছেন।

রেণুকার সাফল্যের এই গল্পটি সত্যিই অনন্য, যা আমাদের শেখায় যে কঠোর পরিশ্রমের সাথে যদি কিছু করার ইচ্ছা থাকে তবে কঠিনতম রাস্তাগুলিও সহজেই পার হয়ে যায়।