টাকা সব নয়। এই সহজ কথা বারেবারে প্রমাণিত হয়েছে মানব সভ্যতায়। নিজের অধ্যবসায়ের জোরে, মোটা অংকের অর্থের হাতছানি উপেক্ষা করে আজ ভারতের একজন কিংবদন্তি প্রায় ব্যক্তিত্ব রাজাগোপালন বাসুদেবন (Rajagopalan Vasudevan)। প্লাস্টিক দিয়ে রাস্তা (Plastic road) তৈরি করে ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম তুলেছেন তিনি। আমেরিকার কাছ থেকে বড় অংকের অর্থের প্রস্তাব পেয়েও তাতে সায় দেননি। বরং নিজ দেশ মাতৃকার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করার সিদ্ধান্তে অটল থেকেছেন রসায়নের এই অধ্যাপক।
প্লাস্টিক আধুনিক সভ্যতার একটি খারাপ দিক। যত দিন এগিয়েছে প্লাস্টিকের ব্যবহার তত বেড়েছে। আর এর ফলে বেড়েছে দূষণের পরিমাণ। স্থলে, জ্বলে উভয় ক্ষেত্রে প্লাস্টিক দূষণ বিজ্ঞানীদের (Scientist) মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে ক্রমাগত। সমস্যা সমাধানে বছর পর বছর অধ্যবসায় করেছেন রাজাগোপালন বাসুদেবন। তিনি মাদুরাইয়ের টিসিই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের একজন অধ্যাপক। ভারতে এখন তিনি পরিচিত ‘প্লাস্টিক ম্যান অফ ইন্ডিয়া’ (Plastic Man of India) নামে।
ভারতের প্লাস্টিক মানবের সাফল্যের পথ অবশ্য খুব একটা মসৃণ ছিল না। জানা যায়, প্রাথমিকভাবে প্লাস্টিক দিয়ে রাস্তা তৈরি করার তার ফর্মুলা তার কাজে লেগেছিল। কিন্তু সেটাই চূড়ান্ত রূপ ছিল না। নিজের কাজকে আরও নিখুঁত করতে চালিয়ে গিয়েছিলেন পরীক্ষানিরীক্ষা। ২০০২ সালে বাসুদেবন প্রথম থিয়াগরাজার কলেজ ক্যাম্পাসে প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে একটি রাস্তা তৈরি করে প্রাথমিকভাবে সাফল্য অর্জন করেছিলেন বাসুদেবন। এরপর আরো দশটা বছর।
অসাধ্য সাধন করে ইতিমধ্যে পুরস্কৃত হয়েছেন তিনি। পেয়েছেন ভারতের সরকারের পদ্ম পুরস্কার। দশ বছরের অধ্যবসায়ের পর তিনি তার ভাবনা পেশ করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার সামনে। এরপরই তাই পরিকল্পনা বাস্তবের রূপ নিতে শুরু করে।
ইতিমধ্যে বাসুদেবনের পরিকল্পনাকে কাজে লাগিয়ে তৈরি হয়েছে কয়েক হাজার কিলোমিটার রাস্তা। শোনা যায়, ভারতীয় এই অধ্যাপকের কাছ থেকে ফর্মুলাটি কিনে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল আমেরিকা। দেওয়া হয়েছিল প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব। কিন্তু তিনি সে দিকে ফিরেও তাকাননি। দেশ মায়ের সেবায় নিজেকে সদা নিয়োজিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজাগোপালন বাসুদেবন।