অবশেষে এলিয়েনদের সাথে যোগাযোগ করল বিজ্ঞানীরা, মহাকাশ থেকে এল ১৮৬৩টি রেডিও সিগন্যাল

‘এলিয়েন’ অর্থাৎ ভিনগ্রহী, এই বস্তটিকে নিয়ে উৎসাহিত নয় এমন মানুষ পাওয়া প্রায় অসম্ভব। সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষের মধ্যে ভিনগ্রহীদের নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। সভ্যতার প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে এই ধারনা। যখন থেকে বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে তখন থেকেই কোটি কোটি টাকা খরচ হয়ে চলেছে এই রহস্যভেদ করতে। মানুষের কল্পনাপ্রবণ মন এঁকে নিয়েছে অদ্ভুত ধরণের কিছু চরিত্রকে। বাস্তবে এলিয়েন কীরকম কি তা হয়তো কোনো মানুষই দেখেনি, এমনকি তারা কোথায় রয়েছেন তাও আমাদের অজানা। কিন্ত তবুও তাদের খোঁজে নিরলস পরিশ্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
এরইমধ্যে বেশ চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য সামনে এসেছে। সূত্রের খবর, বিজ্ঞানীরা নাকি দাবি করেছেন যে, এবার নাকি এলিয়েনদের দুনিয়ার (Alien World) সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়েছে। এমনকি তারা এটাও জানিয়েছেন যে, প্রতিনিয়ত মহাকাশের কোনো একটা কোণ থেকে পৃথিবীতে আসা নির্দিষ্ট কিছু সিগন্যাল পাচ্ছেন। সংকেতগুলি রেকর্ড করার পর জানা গিয়েছে যে, এগুলি মূলত নতুন ধরণের একটা রেডিও সংকেত।
তবে এই সংকেতগুলি সাধারণ ফাস্ট রেডিও বার্স্ট (Fast Radio Burst, FRB) থেকে অনেকটাই ভিন্ন প্রকৃতির। যেখান থেকে এই সংকেতগুলি আসছে সেখানে টানা অনুসন্ধান করার পর জানা গিয়েছে যে, ৮২ ঘন্টার ব্যবধানে মোট ১,৮৬৩ টি সংকেত এসেছে পৃথিবীতে। বিজ্ঞানীমহল থেকে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, এই সংকেত গুলির উৎসস্থল হলো পৃথিবী থেকে বহুদূরে থাকা একটি গ্যালাক্সি। যার উৎসস্থলের নাম FRB 20201124A।
প্রসঙ্গত বলে রাখি, এই রেডিও সংকেতটি ক্যাপচার করেছে একটি চিনা সংস্থা। সংস্থাটি তাদের ফাইভ হান্ড্রেড মিটার অ্যাপারচার স্ফেরিক্যাল রেডিও টেলিস্কোপ (FAST) ব্যবহার করে এই অসাধ্য সাধন করেছে। পাশাপাশি এই বিষয়টির উপর গবেষণারত জ্যোতির্বিজ্ঞানী হেং শু এই সংকেতগুলির প্রসঙ্গে জানিয়েছেন যে, সেই গ্যালাক্সিতে একটি ম্যাগনেটার বা নিউট্রন স্টার রয়েছে। এবং সেটিই এই রেডিও সংকেতের উৎস। তিনি এও বলেছেন যে, ওই নক্ষত্রের নাকি একটি খুব উচ্চ চৌম্বক ক্ষেত্রও আছে।
ঘটনাটি নিয়ে সাড়া পড়েছে গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানী মহলেই। লাস ভেগাসের নেভাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট বিং ঝাং-এর কথায়, “এই রেডিও সংকেতগুলি আমাদের হুঁশ উড়িয়ে দিয়েছে। আপাতত আমেরিকা এবং চিনদেশের বিজ্ঞানীরা সেগুলিকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য একসাথে কাজ করছেন। এটা আমাদের কল্পনার চেয়েও অনেক বেশি রহস্যময়। এখান থেকে বিভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের রেডিও সংকেত পাওয়া যাচ্ছে এবং সেগুলি নিয়ে পরীক্ষা নিরিক্ষাও চলছে। অন্য কোনো পৃথিবী থেকে আমাদের কাছে কোনো বার্তা আসছে না কি তাও দেখা হচ্ছে। কিন্তু, সেগুলিকে বোঝা এতটাও সহজ নয়। মনে হচ্ছে, FRB 20201124A-এর গ্যালাক্সি আমাদের নিজস্ব গ্যালাক্সির মতো।”
আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগে আবিষ্কার হয় ফাস্ট রেডিও বার্স্ট (FRB)। তবে এই সংকেতগুলির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বোঝা এতটাও সহজ নয়। এই রেডিও বিস্ফোরণগুলির শক্তি প্রায় একসঙ্গে ৫০ কোটি সূর্যের সমান। তবে লক্ষনীয় বিষয় হলো, অধিকাংশ FRB শুধুমাত্র একবার বিস্ফারিত হয়। সাল ২০২০-তে প্রথমবার আমাদের আকাশগঙ্গার ভিতরে ফাস্ট রেডিও বার্স্টের খোঁজ পাওয়া যায়। আর তাই বিজ্ঞানীরা FRB 20201124A কে খুব ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো যে, সোর্স সিগন্যাল পাঠানোর পাশাপাশি এটি পোলারাইজেশনও করছে। এর অর্থ হলো যে, সেই সংকেত মহাকাশে ত্রিমাত্রিকভাবে আলোর রশ্মি পাঠাচ্ছে। আপাতত সেই নিয়েই গবেষণা করছে বিজ্ঞানীমহল। প্রসঙ্গত এই মহাজাগতিক সংকেত ০.২ সেকেন্ড অন্তর তিন সেকেন্ডের ব্যবধানে আসছিল। এই রেডিও তরঙ্গগুলি কানাডিয়ান হাইড্রোজেন ইনটেনসিটি ম্যাপিং এক্সপেরিমেন্ট (CHIME) দ্বারা রেকর্ড করা হয়।