আর ২৭ বছর, তারপরেই শুকিয়ে যাবে ভারতের গঙ্গা সহ এই তিন প্রধান নদী! ভয়ঙ্কর রিপোর্ট বিজ্ঞানীদের

বিশ্ব উষ্ণায়নের বড় প্রভাব পড়ছে বিশ্বজুড়ে। বিশেষ করে যেভাবে আবহাওয়ার (India) পরিবর্তন হচ্ছে তা খুবই চিন্তাজনক বিষয়। তাপমাত্রা বাড়ার কারণে হিমবাহ গলতে শুরু করেছে। আর এসবের মধ্যে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জানিয়েছেন যে, হিমালয়ের তিন প্রধান নদী সিন্ধু (Indus River), গঙ্গা (Ganges) ও ব্রহ্মপুত্রের (Brahmaputra) জলের স্তর খুব দ্রুত কমতে চলেছে। আর তার প্রভাব পড়বে মানুষের ওপর। রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে ১৭০ থেকে ২৪০ কোটি মানুষ কম পরিমাণ জল পাবেন।
জাতিসংঘের মহসচিব হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, পৃথিবীতে আর মাত্র ১০% হিমবাহ রয়েছে। কিন্তু সেগুলো কতদিন থাকে সেটা নিয়ে বেশ সন্দেহ জারি করেছেন তিনি, কারণ অ্যান্টার্কটিকাতে প্রতি বছর ১৫ বিলিয়ন টন বরফ কমছে, গ্রিনল্যান্ডে সেই সংখ্যা ২৭ বিলিয়ন টন! এরপরই রয়েছে হিমালয়। এদিকে এশিয়া মহাদেশের প্রধান ১০টি নদী হিমালয়ের জলেই পুষ্ট। যা ১৩০ কোটি মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জল সরবরাহ করছে। আর হিমবাহের গলনের কারণে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে গঙ্গা, সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্র নদীর ওপর। সেখানে কমতে পারে জলের স্তর।
হিমবাহ গলনের কারণে যেমন জলের পরিমাণ কমবে, তেমনই বন্যা আসতে পারে পাকিস্তান (Pakistan) ও চীনে (China)। গঙ্গার কারণে আবার সমস্যা হবে ভারতে (India)। উল্লেখ্য, ২৫০০ কিমি গঙ্গা নদীর ওপর নির্ভর করছেন ৪০ কোটি মানুষ। কিন্তু বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে গত ৮৭ বছরে ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ হিমবাহের এক-চতুর্থাংশ থেকে দুই কিলোমিটার অংশ গলে গিয়েছে, যা অত্যন্ত চিন্তাজনক বিষয়। বর্তমানে ভারতের ভাগের হিমালয়ে আর ৯৫৭৫টি হিমবাহই রয়েছে। কিন্তু তাপমাত্রা বাড়ায় সেগুলোও হুমকির মুখে পড়েছে।
সবচেয়ে চিন্তাজনক রিপোর্ট জানা গেছে দেরাদুন-ভিত্তিক ওয়াদিয়া ইনস্টিটিউট অফ হিমালয়ান জিওলজির বিজ্ঞানী ডঃ রকেশ ভামব্রির থেকে। তিনি জানান ১৯৩৫ থেকে ২০২২ পর্যন্ত মোট ১৭০০ মিটার পিছিয়ে গিয়েছে হিমবাহ। শীতকালে পবিত্র গঙ্গা নদীর উৎপত্তিস্থল গো-মুখে বেশি বরফ পড়লেও আজকাল তুষারপাত কমে গেছে। প্রতিনিয়ত আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে, আর সেই কারণে দ্রুত গলে যাচ্ছে গঙ্গোত্রী। তুষারপাতের পরিমাণও কমে গিয়েছে অনেকখানি। অন্যদিকে বেড়েছে বৃষ্টি, আর তারফলে গোমুখ হিমবাহের আশপাশের এলাকা দ্রুত গলেছে।
বিজ্ঞানীরা বর্তমানে শ্যেন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রয়েছেন গঙ্গোত্রী, চোরাবাড়ি, দুনাগিরি, ডকরিয়ানি ও পিন্ডারী হিমবাহের ওপর। এরমধ্যে প্রশ্ন আসে, তাহলে কবে সম্পূর্ন রূপে গলে যাবে গঙ্গোত্রী হিমবাহ? বিজ্ঞানীরা জানান, সেটা বলাটা বেশ মুশকিল। তবে হিমবাহ শতাব্দী ধরে থাকলেও কমে যাবে গঙ্গার জলস্তর। উল্লেখ্য যে, গত ১০ বছরেই ৩০০ মিটার গলে গিয়েছে এই হিমবাহের। এই হারে চললে আগামী ১৫০০ থেকে ১৫৩৫ বছরের মধ্যে পুরোপুরিভাবে গলে যাবে হিমবাহ।
সাথে এবার বদলেছে উত্তরাখণ্ডে বৃষ্টিপাতের ধরণ। বৃষ্টি বেশি হলেও সময় ও পরিমাণ নির্দিষ্ট থাকেনা। তবে এভাবে বৃষ্টি চলতে থাকলে হিমালয়ের ওপরে থাকা হিমবাহ গলে নীচে চলে যাবে। নেচার জার্নালে প্রকাশিত রিপোর্ট আরো বড় এক খবরের বিষয়ে জানিয়েছে। সেখানে রিপোর্টে দাবি করা হয়, গত কয়েক দশকে, ১০ গুণ গতিতে গলেছে বরফ। সাথে এও জানা গিয়েছে, হিমালয় থেকে হারিয়ে গিয়েছে হিমবাহের ৪০%। এবার তার প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে ১.৩৮ মিলিমিটার পর্যন্ত।
জানিয়ে রাখি, আর্কটিক এবং অ্যান্টার্কটিকার পরে হিমালয়ে হিমবাহের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সেজন্য আবার হিমালয়কে তৃতীয় মেরুও বলা হয়ে থাকে। কিন্তু বরফ গলে যাওয়ার কারণে শীঘ্রই বড় বড় নদীতে জলের সংকট দেখা দেবে। আবার আরো এক সমস্যা উদ্ভুত হয়েছে এর মধ্যে, হিমালয়ের হিমবাহ দ্রুত গলে যাওয়ার কারণে তৈরি হয়েছে অনেক হ্রদ। যা বেশ বিপজ্জনক। কারণ, কোনোভাবে সেগুলো ভেঙ্গে গেলে আকছার কেদারনাথে আসা বন্যার মতো ঘটনা ঘটবে।