করোনায় মৃত্যু ছেলের, এক বছর পর বিধবা পুত্রবধূর মেয়ের মতোই কন্যাদান করলেন শ্বশুর-শাশুড়ি

চীনা ভাইরাস কোভিড-১৯ কেড়ে নিয়েছে বহু প্রাণ। নষ্ট হয়েছে অনেক পরিবারের সুখ শান্তি। এইসব অসহায় মানুষের মধ্যে একজন হলেন SBI-এর অবসরপ্রাপ্ত অফিসার যুগপ্রকাশ তিওয়ারি। মধ্যপ্রদেশের ধর জেলার প্রকাশ নগরের বাসিন্দা তিনি৷ সংসারে সবকিছু ভালোই চলছিল। এমনসময়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে পরিবারে নেমে আসে বিপদ। জানা যায় ছেলে প্রিয়াঙ্ক তিওয়ারি যিনি পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। ২৫ এপ্রিল ২০২১ সালে তাঁকে ভোপালে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি, ভোপালে চিকিৎসা চলাকালীন প্রিয়াঙ্কের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সাথে সাথে সমস্ত আনন্দের অবসান ঘটে এই পরিবারটির।
এমতাবস্থায় যুগপ্রকাশ তিওয়ারির পরিবারের সদস্য বলতে তার স্ত্রী বিধবা পুত্রবধূ এবং ৯ বছরের নাতনি। পুত্রবধূ রিচার বয়স সবে ৩২, এখনও পুরো জীবন তার বাকি এই কথা ভাবাতে লাগলো শাশুড়িকে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যুগপ্রকাশ তিওয়ারি এবং তার স্ত্রী ঠিক করেন পুনর্বিবাহ করাবেন তাদের পুত্রবধূর। একটা দূর্ঘটনার জন্য রিচার ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে চাননি তারা। কিন্তু এই প্রস্তাবে বেঁকে বসেন রিচা নিজে। বিগত এক বছর ধরে বোঝানোর পর অবশেষে প্রিয়াঙ্কের প্রথম বর্ষপূর্তির দিনে দ্বিতীয় বিয়েতে সম্মতি দেন তিনি।
রিচা সম্মতি দেওয়ার পর তার জন্য যোগ্য পাত্রের সন্ধান শুরু করেন যুগপ্রকাশ এবং তার স্ত্রী। তারপরই পরিচয় হয় নাগপুরে বসবাসকারী ইঞ্জিনিয়ার বরুণ মিশ্রের সঙ্গে। কথাবার্তায় ঠিক মনে হওয়ায় পুত্রবধূ রিচা আর বরুনের চার হাত এক করার কথা ভাবেন তারা। যেই ভাবা সেই কাজ, বিয়ের প্রস্তাব পাঠান তারা এবং আনন্দের বিষয় বরুণের বাড়ির লোকজনও এই বিয়েতে সম্মতি জানায়। অক্ষয় তৃতীয়ার শুভক্ষণে বিবাহের তারিখ ঠিক করা হয়। এরপরই সপরিবারে নাগপুর পৌঁছে বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন যুগপ্রকাশ। সেখানেই গত ৩ মে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় দুজনে। প্রসঙ্গত, এই বিয়েতে যাবতীয় খরচ বহন করেছেন যুগপ্রকাশ এবং তার স্ত্রী।
বিয়েতে প্রতিটি আচার অনুষ্ঠান নিজের হাতে পালন করেছেন এই দম্পতি। নিজের মেয়ের মতোই পুত্রবধূর সম্প্রদান করেছেন। একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে যুগপ্রকাশ তিওয়ারি বলেন, “পুত্রবধূকে যদি কন্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের সুখের জন্য এমন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। সেই পরিবারও আমার নাতনিকে মেনে নিয়েছে। আমি খুব খুশি।”
এর পাশাপাশি নাগপুরে একটি বাংলো কিনেছিলেন যুগপ্রকাশ তিওয়ারির ছেলে। বিয়ের উপহারস্বরুপ বাংলোটি পুত্রবধূ এবং তার স্বামীর নামে করে দিয়েছেন এই দম্পতি। উভয় পরিবারের সম্মতিতে ঠিক করা হয়েছে বিয়ের পর নিজের বাড়ির মতোই যুগপ্রকাশের বাড়িতে যাতায়াত করবে রিচা। দুটি পরিবারই নিজেদের আত্মীয়তা বজায় রাখবে। বিরল এই ঘটনায় বাহবা জানিয়েছেন সারা দেশের মানুষ।