৮ বছর বয়সে হারান দৃষ্টিশক্তি, অদম্য ইচ্ছাশক্তির জেরে মাইক্রোসফটে ৪৭ লাখ টাকার চাকরি পেলেন যশ

ইচ্ছাশক্তি আর মনের জোরের কাছে যে সমস্ত বাধাই তুচ্ছ তারই জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ হলো ইন্দোরের এই যুবক। তার মনের জোরের কাছে হার মেনেছে শারিরীক প্রতিবন্ধকতাও। যেখানে আজ দেশের লাখো সুস্থ মানুষ অজুহাত দেখিয়ে হার মেনে নেন সেখানে তিনি গড়ে তুলেছেন নতুন মাইলস্টোন।
জানা গিয়েছে, ইন্দোরবাসী যশ সোনকিয়া জন্ম থেকেই গ্লুকোমা রোগের শিকার। ফলস্বরূপ মাত্র ৮ বছর বয়সে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। একটা ৮ বছরের শিশু, যার এখনও গোটা দুনিয়া দেখা বাকি, হঠাৎ করেই তার আশেপাশের সবকিছু অন্ধকার। ঠিক সেই আবহেই নিজের প্রতি অটুট বিশ্বাস রেখে নিজের স্বপ্নের কাছে পৌঁছে গেলেন সোনকিয়া।
দৃষ্টিহীনরাও যে স্বপ্ন দেখতে পারে তারই নজীরবিহীন উদাহরণ তৈরি করেছেন তিনি। তার শারীরিক অক্ষমতা সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নকে সামান্যতমও ম্লান করতে পারেনি। জেনে অবাক হবেন যে, বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আইটি কোম্পানি মাইক্রোসফট ৪৭ লক্ষ টাকার প্যাকেজ সহ চাকরির প্রস্তাব দিয়েছে সোনকিয়াকে।
সম্প্রতি শ্রী জিএস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স (এসজিএসআইটিএস) এর একজন মূখ্য কর্মকর্তার কথা থেকে জানা গেছে যে, ২০২১ সালে এই সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্বায়ত্তশাসিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে বি.টেক ডিগ্রি অর্জন করেন সোনকিয়া। এবং বর্তমানে তিনি প্রায় ৪৭ লক্ষ টাকার প্যাকেজ সহ একটি চাকরির প্রস্তাব পেয়েছেন মাইক্রোসফ্ট থেকে।
বছর ২৫ এর সোনকিয়াকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি জানান, কর্মসূত্রে খুব শীঘ্রই তিনি ব্যাঙ্গালোরের উদ্দ্যেশ্যে পাড়ি দেবেন। যদিও এখন তাকে বাড়ি থেকেই কাজ করার অনুমতি দিয়েছে কোম্পানি। আজ তার এই কৃতিত্বের জন্য দেশজুড়ে জয়জয়কার হচ্ছে ঠিকই কিন্তু তার এই সফর কি এতোটাই সহজ ছিলো?
সোনকিয়ার কথায়, “বিশেষ প্রযুক্তির স্ক্রিনরিডার সফটওয়্যারের সাহায্যে বি.টেক. পড়াশোনা শেষ করে চাকরি খুঁজছিলাম। আমি কোডিং শিখেছি এবং মাইক্রোসফ্ট-এ আবেদন করি। অনলাইন পরীক্ষা ও ইন্টারভিউয়ের পর আমি ওই কোম্পানিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার পদে নির্বাচিত হয়েছি।” প্রসঙ্গত, সোনকিয়ার বাবা শহরে একটি ক্যান্টিন চালান। ছেলের জন্মের পরই তিনি জানতে পারেন যে তার জন্মগত গ্লুকোমা রোগ হয়েছে।
পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত তারা সোনকিয়াকে স্পেশাল চাইল্ড স্কুলে পড়ালেও ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে সাধারণ স্কুলেই ভর্তি করেন। সেখানেই তার এক সহপাঠী গণিত এবং বিজ্ঞান বিষয়ে সাহায্য করে। ছেলের কৃতিত্ব নিয়ে আবেগাপ্লুত বাবা বলেন, “যশ আমার বড় ছেলে এবং তার সঙ্গে আমারও স্বপ্ন ছিল। অনেক সংগ্রামের পর অবশেষে তার পেশাদার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে”। সর্বোপরি যশ সোনকিয়া আজ লাখো তরুণের অনুপ্রেরণা।