বর্তমান সময়ে অভিনেতা সানি দেওল (Sunny Deol) অভিনীত ‘গদর ২’ (Gadar 2) সিনেমা চর্চায় রয়েছে। এই সিনেমাকে নিয়ে তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে দিকে দিকে। এত বছর পরেও তারা সিং ও সাকিনার প্রেম কাহিনী দেখতে সিনেমা হলমুখী হয়েছেন দর্শক। ভালোবাসাও একটা অদ্ভুত জিনিস। যখন এটি ঘটে, তখন সবকিছুই যেন ভুলিয়ে দেয়। হির রানঝা, লায়লা মজনু, কতজনের প্রেম কাহিনী ইতিহাসে রয়েছে। প্রেমের গল্পে রয়েছে ত্যাগ, জেদ, উন্মাদনা। অনেকেই আছেন যারা পর্দায় সাকিনা ও তারা সিংয়ের প্রেম কাহিনী দেখে মুগ্ধ হন। তবে আপনি কি জানেন, এরকম প্রেম কাহিনী সত্যিই একজনের রয়েছে? হ্যাঁ ঠিক শুনছেন, আজ এই প্রতিবেদনে তেমনই এক প্রেম কাহিনী নিয়ে আলোচনা হবে।
এই কাহিনী হল পাকিস্তানের (Pakistan) জায়নব এবং সিপাহী বুটা সিংয়ের (Boota Singh)। অনেকেই হয়তো জানেন না যে সানি দেওল ও আমিশা প্যাটেলের ‘গদর: এক প্রেম কথা’ সিপাহী বুটা সিং জীবনের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছিল। দুটি দেশ জায়নব এবং বুটা সিংয়ের প্রেম কাহিনীকে হ্যাপি এন্ডিং হতে দেয়নি।
বুটা সিং তার স্ত্রীকে নিতে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন এবং সেখানে জায়নব আবার বিয়ে করেছিলেন। বুটা সিংকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। বুটা সিং ভালোবাসার জন্য নিজের প্রাণ দিয়েছিলেন। বুটা সিং পাঞ্জাবের জলন্ধরে জন্মগ্রহণ করেন। লর্ড মাউন্টব্যাটেনের নেতৃত্বে যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। দেশভাগের পর যখন হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা চলছিল, নারীদের নির্যাতন করা হচ্ছিল, তখন বুটা সিং একজন মুসলিম মেয়ের জীবন বাঁচিয়েছিলেন। মেয়েটির নাম ছিল জায়নব।
বলা হয়, নাকি দাঙ্গার সময়ে জায়নব অমৃতসরের একটি জায়গায় লুকিয়ে ছিল, যদিও সে দাঙ্গাবাজদের হাতে ধরা পড়ে যায়। তবে পরে বুটা সিং দাঙ্গাবাজদের টাকা দিয়ে জায়নবকে কিনেছিল। অন্য একটি গল্প অনুসারে, বুটা সিং ছিলেন ৫৫ বছর বয়সী একজন অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক এবং জায়নব ছিলেন ১৯-২০ বছর বয়সী মেয়ে।
জয়নব বুটা সিংয়ের সাথে বসবাস শুরু করেছিলেন এবং দুজনেই একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করেছিলেন। ধর্মের দেওয়াল দু’জনের ভালোবাসার সামনে দাঁড়াতে পারেনি। দুজনে বিয়েও করেছিলেন জানা গিয়েছিল, জায়নবের পরিবার অবিভক্ত ভারতের পূর্ব পাঞ্জাবে বসবাস করত। যদিও দেশ ভাগের পর সরকার সেই বিয়েকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। যেহেতু জয়নাব পাকিস্তানের নাগরিক ছিলেন তাই তাঁকে বাধ্যতামূলকভাবে পাকিস্তান চলে যেতে হয়। তবে বুটা সিং-র পাকিস্তান যাওয়ার অনুমতি ছিল না।
জয়নব যখন পাকিস্তান থেকে ফিরে আসেননি এবং তার পুনর্বিবাহের খবর আসতে শুরু করে, তখন বুটা সিং পাকিস্তানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। একটি রিপোর্ট অনুসারে, বুটা সিং দিল্লিতে পাকিস্তান হাই কমিশনে গিয়েছিলেন এবং ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন। এটিও বলা হয় যে তিনি শিখ ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং জামিল আহমেদ হয়েছিলেন যাতে তিনি পাকিস্তানি পাসপোর্ট পেতে পারেন বা পাকিস্তানে যাওয়ার অনুমতি পেতে পারেন।
তবে জায়নব আর নিজের স্বামী, সন্তানের কাছে ফিরে আসতে চাননি। বলা হয়, এই দুঃখে বুটা সিং ও তাঁর মেয়ে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এরপর তাঁকে নাকি ‘শহীদ এ মহব্বত’-এর
আখ্যাও দেওয়া হয়।