বন্দে ভারত এক্সপ্রেস….দেশবাসীর মুখে এখন এই একটাই নাম। দেশের সব রাজ্যেই এই ট্রেন চালানোর দাবি তুলেছেন মানুষ। যেমন আরামদায়ক যাত্রা তেমনই একটি প্রিমিয়াম ট্রেন, এই ট্রেনে একবার যে উঠেছে, তার বারবার এতে ওঠার ইচ্ছা হয়।
দেশের রেল ব্যবস্থা একেবারে আমূল বদলে দিয়েছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। যত সময় এগোচ্ছে ততই যেন ভারতীয় রেল (Indian Railways) ব্যবস্থার মূল নকশাই বদলে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। যদিও এরই মাঝে এই বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন যেন বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ালো সরকারের কাছে। ব্যাপারটা ঠিক কি তা নিশ্চয়ই আপনারও জানতে ইচ্ছা করছে?
বন্দে ভারত ট্রেন নিয়ে এবার কিনা ভারত ও রাশিয়া কেন বিবাদে জড়িয়ে গেল? এটা তো সকলেই জানে যে ভারত ও রাশিয়া সর্বকালের বন্ধু। অন্তত বিশ্বের কাছে তো এমনই বার্তা দেওয়া হয়। তবে আজকাল একটি চুক্তি নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে দুই দেশ। এই চুক্তিটি ভারতে তৈরি বন্দে ভারত ট্রেন সম্পর্কে।
জানা গিয়েছে, ১২০টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন নির্মাণ, সরবরাহ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিড জিতেছে রাশিয়ান কোম্পানি ট্রান্সম্যাশহোল্ডিং (টিএমএইচ)। এটি একটি যৌথ উদ্যোগ হবে। অর্থাৎ ভারত ও রাশিয়ার কোম্পানি একসঙ্গে এই ট্রেনগুলি তৈরি করবে। কিন্তু এখন ট্রেন নির্মাণ সংক্রান্ত এই যৌথ উদ্যোগের অংশীদারিত্ব নিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে
যৌথ উদ্যোগের সাথে জড়িত ভারতীয় সংস্থাটি তার অংশীদারিত্ব আরও বেশি করতে চায়। তবে রুশ প্রতিষ্ঠানটি এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে এবং এটি বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। আগামী ৩৫ বছরের জন্য ১২০টি নতুন বন্দে ভারত ট্রেন তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৩০,০০০ কোটি টাকার চুক্তি পেয়েছে ভারত ও রাশিয়া।
মেট্রোওয়াগনমশ সফলভাবে ১২০টি বন্দে ভারত ট্রেনের উৎপাদন এবং পরবর্তী ৩৫ বছরের জন্য তাদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা রেল বিকাশ নিগম লিমিটেডের (আরভিএনএল) সহযোগিতায় বিড জিতেছে।
মেট্রোওয়াগনমাশ রাশিয়ার বৃহত্তম পরিবহন সংস্থা ট্রান্সম্যাশহোল্ডিং এর অংশ। আপনি জানলে হয়তো অবাক হবেন যে মেট্রোওয়াগনমাশের রেলওয়ের জন্য রোলিং স্টকের উন্নয়ন, নকশা এবং উৎপাদনে দক্ষতা রয়েছে।
এই যৌথ উদ্যোগে মেট্রোওয়াগনম্যাশের ৮০% এবং আরভিএনএল-এর ২০% শেয়ার রয়েছে। কিন্তু আরভিএনএল এখন ৬৯ শতাংশ শেয়ার চায়। এর মধ্যে মেট্রোওয়াগনম্যাশের কাছে ২৬ শতাংশ এবং তৃতীয় অংশীদার লোকোমোটিভ ইলেকট্রনিক সিস্টেমের (এলইএস) কাছে ৫ শতাংশ শেয়ার গেছে।
২০২৩ সালের ২৫ এপ্রিল মেট্রোওয়াগনম্যাশকে লেখা এক চিঠিতে আরভিএনএল জানিয়েছে যে তারা “কিনেট রেলওয়ে সলিউশনস লিমিটেড (কেআরএসএল) নামে একটি সম্পূর্ণ মালিকানাধীন বেসরকারী সংস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
সংস্থাটি একটি এসপিভি (স্পেশাল পারপাস ভেহিকেল) হিসাবে কাজ করবে যা রেলমন্ত্রকের সাথে একটি উত্পাদন-রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি স্বাক্ষর করবে এবং পরবর্তীতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। আরভিএনএল চিঠিতে বলেছে যে একটি সরকারী সংস্থা হিসাবে এটি ছাড়পত্র প্রাপ্তি এবং স্থানীয় জনশক্তিকে জড়িত করার মতো বিষয়গুলি পরিচালনা করার জন্য আরও ভাল অবস্থানে রয়েছে।
বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আরভিএনএল একটি বিশ্বস্ত পাবলিক সেক্টর সত্তা। সরকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির সাথে এর একটি শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। অতএব, এসপিভির পক্ষে সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক হারে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে তহবিল সংগ্রহ করা সহজ হবে।
রাশিয়ার ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ ৮ মে ভারত সরকারকে একটি নোট পাঠিয়ে আরভিএনএলকে মূল চুক্তি মেনে চলার নির্দেশ দিতে বলেছে। আর এরপরেই শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব। দুটি সংস্থার মধ্যে দ্বন্দ্ব অব্যাহত রয়েছে এবং এখন বিষয়টি দুই সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।