নয়া দিল্লিঃ চীনের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসনের মধ্যে মেলবোর্নে কোয়াড গ্রুপের বিদেশ মন্ত্রীদের বৈঠকে ভারত তার শক্তি অনুভব করিয়েছে। ইউক্রেন হোক বা বার্মা (মিয়ানমার), ভারত তার অবস্থান একেবারে পরিষ্কার রেখেছে। বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন বিদেশমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের উপস্থিতিতে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, আমেরিকার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব তিনি কখনোই ভাঙবেন না।
উপরন্তু তিনি জুনটার উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপকে সমর্থন করেনি। ভারত সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে জাতিসংঘে আলোচনার পরই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করাকে সমর্থন করে। তারা কোনো দেশ বা দেশের গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে জারি করা একতরফা নিষেধাজ্ঞার পক্ষে নয়। ভারতের বার্তাটি হলো কোনো চাপে তার স্বার্থের সঙ্গে আপস করবে না। ভারত নিজের শর্তে সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চায়
বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তায় আরও বড় ভূমিকা পালনের জন্য চতুর্বার্ষিক জোটের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলে চীন তার সামরিক শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণ চীন সাগরের প্রায় পুরোটাই দাবি করে আসছে চীন। অন্যদিকে তাইওয়ান, ফিলিপাইন, ব্রুনাই, মালয়েশিয়া এবং ভিয়েতনামও এর বিভিন্ন অংশ দাবি করে। দক্ষিণ চীন সাগরে কৃত্রিম দ্বীপ ও সামরিক স্থাপনা নির্মাণ করেছে বেইজিং। পূর্ব চীন সাগর নিয়ে জাপানের সাথেও বেইজিংয়ের সামুদ্রিক বিরোধ রয়েছে। চীনের এই আগ্রাসন মোকাবেলায় কোয়াড গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভারত, জাপান, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া।
তবে এই বৈঠকে ইউক্রেন ও মিয়ানমার ইস্যু নিয়ে মতভেদ স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান ছিল। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ভারত ইউক্রেনের ব্যাপারে চরম অবস্থানের পক্ষে নয়। বৈঠকে রাশিয়া নিয়ে আলোচনা হয়। তবে যৌথ বিবৃতিতে তা উল্লেখ করা হয়নি। ব্লিঙ্কেন পরে বলেছেন যে, রাশিয়া যে কোনও সময় ইউক্রেন আক্রমণ করতে পারে। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ভারতের অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন যে, ভারত ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে (UNSC) তার পক্ষ উপস্থাপন করেছে। ভারত চায় সব দেশের নিরাপত্তার বিষয়ে খেয়াল রাখা হোক।
মিয়ানমার ইস্যুতে ভারতের অবস্থান আমেরিকার চেয়ে ভিন্ন ছিল। অস্ট্রেলিয়ার অবস্থানও ভারতের সঙ্গে মিলে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং কানাডা মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের দায়বদ্ধতার জন্য স্থানীয় কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে, ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা জাতীয় নিষেধাজ্ঞার নীতিকে সমর্থন করে না। ভারত স্পষ্টভাবে বলেছে যে, তারা কোনো দেশ বা দেশের গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে কোনো একতরফা নিষেধাজ্ঞা গ্রহণ করে না। এই ক্ষেত্রে, তারা শুধুমাত্র জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার সাথে একমত।