এক কেলেঙ্কারিতে হারিয়েছিলেন সর্বস্ব, রাস্তায় ব্যাগ করে আজ গড়েছেন ২৫০ কোটির সাম্রাজ্য

মুম্বইঃ প্রবাদ আছে, ‘পরিশ্রমই সাফল্যের চাবিকাঠি’। পরিশ্রমের দ্বারা ভাগ্যের চাবিকাঠি পরিবর্তন করা সম্ভব। বেশিরভাগ মানুষই পরিস্থিতির সামনে নিজেকে সঁপে দেন। কিন্তু কিছু মানুষ আছেন যারা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়ে জীবনে এগিয়ে যাওয়ার মনোবল তৈরি করেন। এমনই একজন হলেন তুষার জৈন।
তুষার জৈন হলেন মূলচাঁদ জৈনের ছেলে। ১৯৯২ সালে হর্ষদ মেহতার শেয়ার কেলেঙ্কারির শিকার হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। যার মধ্যে মূলচাঁদ জৈন ছিলেন একজন এবং শেষমেশ তিনি ছেলে তুষার জৈনের সাথে মুম্বাইয়ের রাস্তায় ব্যাগ বিক্রি করতে শুরু করেন। সেই জায়গা থেকে উঠে এসে তুষার জৈন আজ হাই স্পিরিট কমার্শিয়াল ভেঞ্চার প্রাইভেট নামে একটি কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং এমডি যার বার্ষিক টার্নওভার ২৫০ কোটি টাকা।
যে কোনো ক্ষেত্রে সফলতার প্রথম শর্ত হল প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রম। আর সেই ইচ্ছাশক্তিকে সম্বল করে নিজের পরিশ্রম দ্বারা সমস্ত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আজ তিনি আড়াইশ’ কোম্পানির মালিক। যেখানে তিনি হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন।
১৯৯২ সালে স্টক ব্রোকার হর্ষদ মেহেতার আর্থিক কেলেঙ্কারির জন্য অনেকেই তাদের কষ্টার্জিত অর্থ হারিয়েছিলেন। যার মধ্যে ছিলেন মূলচাঁদ জৈন। অনেকের মতো তিনিও সর্বশান্ত হয়েছিলেন। মূলচাঁদ মূলত ঝাড়খন্ডের বাসিন্দা। এই ঘটনার পর তিনি মুম্বাই এর রাস্তায় হকারি করতে শুরু করেন। সাথে ছিলো ছেলে তুষার। সেখান থেকেই শুরু।
১৯৯৯ সালে তুষার জৈন ৩০০ খুচরা বিক্রেতার সাথে একটি ব্যবসা শুরু করেন। ২০০৬ সালে তিনি চলে আসেন মুম্বাই, সেখানেই প্রথম তিনি স্থাপন করেন প্রায়োরিটি নামক একটি নতুন ব্র্যান্ড। ধীরে ধীরে ব্র্যান্ডের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ২০১৪ সালে তুষারের কোম্পানি দিনে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার ব্যাগ উৎপাদন করত। তখন কোম্পানিটির টার্নওভার ছিল ৯০ কোটি টাকা।
২০১৭ সাল নাগাদ তিনি মার্কেটে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। বার্ষিক টার্নওভার দাঁড়ায় আড়াইশো কোটি টাকা, এই সময় দিনে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার ব্যাগ তৈরি করতে শুরু করে তার কোম্পানি। এই মুহূর্তে ভারতের চতুর্থ বৃহৎ ব্যাকপ্যাক এবং ব্যাগ বিক্রির সংস্থা এটি। মুম্বইয়ে আছে এর সদর দফতর। সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় মোট ১০টি আলাদা অফিস রয়েছে। সম্প্রতি তিনি পাটনায় একটি নতুন প্ল্যান্ট স্থাপন করছেন, যেখানে বছরে ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ ব্যাগ তৈরি করা হবে।
সাফল্যের সিঁড়িতে উঠে তুষারের সংস্থা ট্রাওয়ার্ল্ড লঞ্চ করে। বলি অভিনেত্রী সোনম কপূর যার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর। তুষার তার একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন তিনি স্বপ্ন দেখেন যে একদিন তার কোম্পানি হাজার কোটি টাকার টার্নওভার পার করে যাবে। মানুষ যদি তার লক্ষ্যে অটুট থাকে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে, তবে একদিন সে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছতে পারে, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ তুষার জৈন। তাই তিনি যে নিজের এই স্বপ্ন একদিন অবশ্যই পূরণ করবেন তা বলাই বাহুল্য।