সবকিছু লুট করেছিল ডাকাতরা, তবুও হার না মেনে ১০০ টাকা দিয়ে শুরু করে আজ বিশাল ব্যাবসায়ি

কলকাতাঃ জীবনে সফলতা কেবলমাত্র তাদেরই কাছে আসে যারা হাল ছেড়ে না দিয়ে তাদের লক্ষ্য অনুসরণ করে চলেছেন। ডাকাতের কবলে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন এমন উদাহরণ বিরল নয়। শুধু আর্থিকভাবেই নয়, মানসিকভাবেও বিদ্ধস্ত হয়ে পড়ে মানুষ। কষ্টার্জিত অর্থ,সম্পদ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কেউ ছিনিয়ে নিয়ে চলে গেলে তা মেনে নেওয়া সত্যিই কষ্টকর।

কিন্তু আজ আমরা আপনাকে এমন এক নারীর গল্প শোনাবো যিনি তার সর্বস্ব লুট হয়ে যাওয়ার পরও হার না মেনে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ঠিক এরকমই এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন কেরালার ত্রিশুরের ব্যবসায়ী ইলাভারসি জয়কান্ত। তার সুপার মার্কেটে ডাকাতেরা হানা দেয় এবং তার সমস্ত সঞ্চয় লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর তিনি দীর্ঘ একমাস যাবৎ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তার সারাজীবনের কঠোর পরিশ্রমের ফল এক রাতের মধ্যে অন্যের দখলে। এই ঘটনার পর প্রাথমিক অবস্থায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেও হার মানেননি ইলাভারসি জয়কান্ত।

ইলাভারসির পরিবার ৪৫ বছর ধরে কেরালার ত্রিশুর জেলায় বসবাস করছে। তার দাদারা পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন মিষ্টির ব্যবসাকে। ছোটোবেলা থেকেই অভাব অনটনকে সাক্ষী রেখে বড়ো হয়েছেন ইলাভারসি। ছোটোবেলা এই পরিবেশেই কেটেছে তার। যখন থেকে দারিদ্র্যতাকে বুঝতে শিখেছেন পরিবারের সাহায্যে নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

এমনকি বিয়ের পর তার সাথ দিয়েছেন তার স্বামী। দুজনে মিলে এই পারিবারিক পরম্পরা অনুযায়ী মিষ্টি আর ফারসানা তৈরি করতে থাকেন। এরপর ধীরে ধীরে আসেপাশের বাড়ি আর দোকানে বিক্রি শুরু হয়। এখান থেকেই শুরু, এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি ইলভারসিকে। এক সাক্ষরতাকারে তিনি বলেন, “আমাদের মিষ্টান্ন দ্রব্যের গুণগত মান ও সুগন্ধ ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেছে। তাই দিন দিন বিক্রি বেড়েছে।”

এরপর তিনি একটি সুপার মার্কেট খোলার পরিকল্পনা করেন যেখানে মিষ্টান্নের পাশাপাশি চিপস, স্ন্যাকস ইত্যাদি রাখা হয়। ২০১০ সালে ব্যাঙ্ক থেকে একটি লোন এবং তার সমস্ত সঞ্চয় তিনি এই দোকানের উপর বিনিয়োগ করেন। এতদিন পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও ডাকাতির ঘটনায় ওলটপালট করে দেয় ইলভারসির জীবন।

এই সময় একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ‘ডাকাতির ঘটনার পর আমি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। ছিনতাইয়ের ঘটনার কয়েক মাস হাসপাতালে ছিলেন তিনি। কোনো ওষুধই কাজ করেনি। এসময় ব্যাংকের থেকে ঋণ পরিশোধের জন্য ফোন আসত প্রায়দিনই।

২০১২ সালে, তিনি ত্রিশুর রেলওয়ে স্টেশনের কাছে তার ‘অশ্বতী হট চিপস স্টল’ খোলেন। মাত্র ১০০ টাকা দিয়ে শুরু করেন নতুন ব্যবসা। এরপরই রেল যাত্রীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেন তিনি। অন্যান্য জায়গা থেকেও লোকজন তার স্টলে আসতে শুরু করেন। কয়েকদিন পর দেখা যায়, স্টলে ক্রেতাদের দীর্ঘ সারি। ইলাভারসীর আয় বাড়তে থাকর পর তিনি তার সমস্ত ঋণ শোধ করতে থাকেন। স্টল থেকে আয় হওয়া টাকায় তিনি ত্রিশুরে অন্য একটি দোকান খোলেন। তার দোকানে এখন চিপস, কেক এবং আচার সহ বিভিন্ন ধরনের স্ন্যাকস বিক্রি হয়। এরপর তিনি ‘উদীয়মান উদ্যোক্তা’ পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন।

➦ আপনার জন্য বিশেষ খবর

Back to top button