বাবা মুচি মা দিনমজুর, ৪৫০০ জনকে চাকরি দিয়েছেন ছেলে! বার্ষিক টার্নওভার ৫০০ কোটি টাকা

জীবন! এক সংঘর্ষের নাম। থাকে যদি ধৈর্য্য, পরিশ্রম করার মানসিকতা এবং সঠিক লক্ষ্য, সফলতা তাহলে শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। জীবনে সফলতা কেবলমাত্র তাদেরই কাছে আসে যারা হাল ছেড়ে না দিয়ে তাদের লক্ষ্য অনুসরণ করে চলেছেন। ঠিক এরম এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন মহারাষ্ট্রের অশোক খাদে। তার জীবন বৃত্তান্ত অনুপ্রাণিত করবে আগামী প্রজন্মকে।
মহারাষ্ট্রের সাংলি জেলায় অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণকারী অশোক , খুবই দারিদ্র্য ও সংগ্রামের জীবন যাপন করেন। ছয় জনের সংসার, কখনো থাকতে হতো খালি পেটে। চাকরির সন্ধানে মুম্বাই আসতে হতো তার বাবাকে। সেখানে তিনি করতেন জুতো সেলাই। গ্রামের একটি সরকারি স্কুল থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করার পর অশোক গ্রামের অন্য স্কুলে চলে যান। অল্প বয়সেই অশোক বুঝতে পেরেছিলেন যে, শিক্ষাই দারিদ্র্য ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির একমাত্র উপায়। তাই চরম দারিদ্রের মধ্যে থেকেও কঠিন অধ্যবসায়ের সাথে চালিয়ে গেছেন নিজের পড়াশোনা। ছোটো বেলায় থাকতনা খাওয়ার টাকাও।
বোর্ড পরীক্ষার পর অশোক মুম্বাইয়ে তার দাদার কাছে চলে আসেন। তার দাদা মাজগাঁও ডকইয়ার্ডে পেয়েছিলেন চাকরি। মূলত দাদার আর্থিকভাবে সাহায্যই তাকে কলেজে পড়াশোনা করতে উৎসাহিত করেছিল। কলেজের পড়াশোনা শেষ করে অশোক চেয়েছিলেন আরও শিক্ষা নিতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিবারকে দেখভালের জন্য তাকে চাকরি করতে হয়। তিনিও দাদার মত মাজগাঁও ডকইয়ার্ডে একটি চাকরি পান। হাতের লেখা খুব ভালো থাকায় এরপর অশোক জাহাজের নকশা তৈরির প্রশিক্ষণ পান। এর চার বছর পর তিনি হয়ে ওঠেন স্থায়ী ড্রাফটসম্যান। তার কাজ ছিল জাহাজের নকশা করা। এর মধ্যে বেতনও বেড়ে হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা।
কিন্তু এতেই থেমে না থেকে অশোক চেয়েছিলেন জীবনে বড় কিছু করতে। তার জন্য প্রয়োজন ছিল উচ্চ শিক্ষার। এজন্য তিনি এরপর চাকরির পাশাপাশি সিদ্ধান্ত নেন ডিপ্লোমা করার। এরই মধ্যে তিনি কাজের সূত্রে জার্মানিতে যাওয়ার সুযোগ পান। সেখানে গিয়ে বিশ্বখ্যাত জার্মান প্রযুক্তিকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পান। এখানেই তিনি তার কাজ সম্পর্কে আরো ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিলেন।
এরপরই ভারতে ফিরে তিনি নিজের ফার্ম তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তার ভাইদের সাথে দাস অফশোর ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুর দিকে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হলেও তিনি কাজ এগিয়ে নিয়ে যান। এপর্যন্ত তার কোম্পানি সমুদ্রে ১০০ টিরও বেশি প্রোজেক্ট সম্পন্ন করে সবার নজর কেড়েছে। শূন্য থেকে শুরু হওয়া এই কোম্পানির টার্নওভার আজ ৫০০ কোটি টাকারও বেশি এবং বর্তমানে ৪ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ কাজ করে এই কোম্পানিতে।