ভারতের সেই মহান রাজা, যিনি বিনা যুদ্ধে ৫০০টি হাতি দিয়েই জয় করেছিলেন আফগানিস্তান

নয়া দিল্লিঃ কয়েকমাস আগেই সারা আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল করেছে তালিবান। এরই সাথে ঝরেছে অজস্র রক্ত। শোনা গিয়েছে বন্দুকের শব্দ, বোমা ফাটার বিকট আওয়াজ আর এরই সাথে মিশেছে সাধারণ মানুষের আর্তনাদ হাহাকার এবং তালিবানের হিংস্রতায় মিশে থাকা উল্লাস ধ্বনি।
গত দুই দশক ধরে এই তালিবানদের মুছে দিতে যুদ্ধ চালিয়েছে আমেরিকারা। পরিবর্তে রক্তপাত ছাড়া মেলেনি কিছুই। অবশ্য আফগানিস্তানে এই প্রথম রক্তপাত হয়নি। নব্বই এর দশকে তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়া আক্রমণ চালায় আফগানিস্তানে। তাঁরাও কিছুই পায়নি। সবাই ফিরে এসেছে খালি হাতেই। এমনকি বিশ্বজুড়ে রাজ করা দোর্দণ্ডপ্রতাপ ব্রিটিশরাও ফিরেছিল খালি হাতেই। কিন্তু ইতিহাস ঘাটলে এমন এক ভারতীয় রাজার নাম উঠে আসে যিনি বিনা রক্তেই জয় করেছিলেন সারা আফগানিস্তান।
সেই রাজা হলেন বিখ্যাত গুরু বিষ্ণুগুপ্ত চাণক্য ওরফে কৌটিল্যর শিষ্য চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য। যিনি মগধ দখল করে মৌর্য সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৩২৬ সালে আলেকজান্ডার ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে শুরু করেছিলন তার বিজয় অভিযান। তার প্রায় ২০ বছর পর এই অঞ্চলে শুরু হয় আবারো যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে আলেকজান্ডারের জেনারেল সেলুকাস পরিচালনা করেন গ্রীক সৈন্যদলকে। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর দিকে মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত আলেকজান্ডারের শাসন করা এলাকার একটি বড় অংশ জয় করে নিয়েছিলেন। এমতাবস্থায় সেলুকাস তার সাম্রাজ্যের সীমানা রক্ষার জন্য পূর্ব দিকে অভিযান চালিয়েছিলেন। উভয়ের সৈন্যদল মুখোমুখি হয় একে অপরের বিরুদ্ধে।
এই যুদ্ধে মগধসম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য বিনা রক্তপাতে জয় করেন আফগনিস্তানকে। এই ঘটনা ইতিহাসের পাতায় আলাদাই জায়গা করে নিয়েছে। একটা সময় ছিল জখন যুদ্ধই ছিল সাম্রাজ্যকে বৃহৎ করার একমাত্র উপায়। সেই মুহূর্তে দাড়িয়ে যুদ্ধের কূটনৈতিক সমাধান খোঁজেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য। তবে এটা নিশ্চিত যে সেলুকাস ভারত আক্রমণ করার জন্য সিন্ধু নদী পার হয়েছিলেন। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে দুই বাহিনী পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছিল কিনা তা ইতিহাসবিদদের বিতর্কের বিষয়।
কিন্তু এরপরই ঘটে এক চুক্তি। যার ফলে শেষ হয় যুদ্ধের। এই চুক্তির অধীনে সেলুকাস ৩০৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের কাছে হস্তান্তর করেন আফগানিস্তান। এছাড়াও সারা আফগানিস্তানের অন্যান্য অঞ্চলও মেনে নেয় চন্দ্রগুপ্তের শাসন। তবে যে চুক্তির ফলে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হতে হতেও থেকে যায় সেই চুক্তির বিনিময় ছিল ৫০০ টি হাতি! হ্যাঁ শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি যে, সেই সময় যুদ্ধ না করে কূটনৈতিকভাবে চুক্তি হয়েছিল এবং তার বিনিময়ের মাধ্যম ছিল ৫০০ টি হাতি।
চন্দ্রগুপ্ত সেলুকাসকে দিয়েছিলেন ৫০০ টি হাতি, চাকর, কিছু জিনিসপত্র এবং শস্য। এটাও বলা হয় যে দুই রাজ্যের মধ্যে স্থাপিত হয়েছিল বৈবাহিক সম্পর্কও। ঐতিহাসিকরা যুক্তি দেন যে চন্দ্রগুপ্ত সম্ভবত সেলুকাসের কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন। তবে সেই বিয়ের বিষয়ে বিস্তারিত জানা নেই কিছুই। তবে বর্তমানে এই এত এত সাম্রাজ্যের কবরস্থান আফগানিস্তানকে সেই সময় বিনা রক্তক্ষয় করেই জয় করেছিলেন মৌর্য সম্রাট।