বাবার মৃত্যুর পর শুরু করে চাষবাস, একটি আইডিয়া লাগিয়েই আজ লেবু থেকে কামাচ্ছেন কয়েক লাখ টাকা

বর্তমান দিনেও ভুরি ভুরি উদাহরন থাকলেও যারা মনে করেন কৃষিতে কিছুই হয় না, তাঁদের সামনে উদাহরণের সৃষ্টি করলেন রাজস্থানের ভিলওয়ারা জেলার বাসিন্দা অভিষেক জৈন। তার জন্ম হয়েছিল এক কৃষক পরিবারে এরপর স্নাতক উত্তীর্ণ হয়ে শুরু করে ব্যবসা। সাফল্যের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেও পাননি কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি। কিন্তু এরপর যখন হঠাৎ তার বাবা মারা যান, তখন তিনি লেবু চাষে নিজের ভাগ্যের পরীক্ষা করেন।
কিন্তু সবদিন এই রাস্তাটা সহজ ছিলনা তার জন্য, শুরুতে কিছু সমস্যা ছিল। কিন্তু পরে এই লেবু চাষই তার জীবন বদলে দেয়। বর্তমানে তিনি লক্ষাধিক টাকা আয় করে ভিলওয়ারার পরিচয়ে পরিণত হয়েছেন। এক সংবাদমাধ্যমের সাথে সাক্ষাৎকারে অভিষেক তার নিজের জীবনের চড়াই উতরাই এর বিস্তারিত বর্ণনা দেন। তার প্রাথমিক পড়াশোনা গ্রামেই এরপরে তিনি গ্রাম ছেড়ে আজমীরে আসেন, যাতে তিনি পড়াশোনা এবং লেখালেখি করে তার ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। কোনো বাধা ছাড়াই তিনি স্নাতক পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করতে পেরেছিলেন। শিক্ষা শেষ করে চাকরি করার অনেক সুযোগ ছিল তার, কিন্তু সে সিদ্ধান্ত নিল সে নিজের কিছু কাজ করবে। পরিবারের সহযোগিতায় তিনি নিজের ব্যবসা শুরু করেন।
প্রথমেই শুরু করেন মার্বেলের ব্যবসা। প্রথম দিকে রোজগার ভালোই হচ্ছিল, কিন্তু সেই পরিমাণ অগ্রগতি হয়নি যা অভিষেক চেয়েছিলেন। এদিকে ২০০৭ সালে তার বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এখান থেকেই বদলে যায় অভিষেকের জীবন। বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে তার কাঁধে। এমতাবস্থায় তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি শহরে না গিয়ে গ্রামেই থাকবেন এবং দাদা ও বাবার মতো কৃষিকাজ করবেন। তবে অভিষেকের পক্ষে কাজটা সহজ ছিল না। এর আগে তিনি কখনো চাষাবাদ করেননি। এমন কিছু করার ইচ্ছা ছিল যাতে সে দুর্বল না হয়ে যায়।
কৃষিকাজ শুরু করার আগে তিনি সব ধরনের কৃষিকাজ নিয়ে অনেক গবেষণা করেন। অবশেষে ২০০৮ সালে তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, তিনি নতুন উপায়ে বাণিজ্যিক চাষ করবেন। এ জন্য তিনি তার ক্ষেত প্রস্তুত করেন এবং রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করেন। এটি তাকে দুটি বড় সুবিধা দিয়েছে। একদিকে চাষের খরচ কমেছে অন্যদিকে জমির উর্বরতাও বেড়েছে। আজ অবধি, অভিষেক প্রায় ৬ একর জমিতে নিজের চাষ করছেন এবং বছরে তার লাভের পরিমান ১২ লক্ষ টাকারও বেশী।
অভিষেক মূলত বাগানে লেবু ও পেয়ারার চাষ করেন। তিনি তিন একর জমিতে লেবু এবং তিন একর জমিতে পেয়ারা গাছের চারা রোপণ করেছেন। লেবুর উদাহরণ দিয়ে অভিষেক বলেন, “এক একর লেবু লাগাতে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয় এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এক একর জমিতে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।” তিনি নিজেও লেবু চাষ করে বছরে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ করছেন। একই সঙ্গে পেয়ারা চাষ থেকে তার আয় তিন লাখ টাকা।
লেবু চাষে একটি বড় সমস্যা অনেক সময় পুরো ফসল একেবারে বাজারে বিক্রি হয় না। এক্ষেত্রে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। এরও উপায় বের করেছেন তিনি, এজন্য তিনি প্রস্তুত করেন লেবুর আচারও তৈরি করেন তিনি। তবে তাকে যখন প্রশ্ন করা হয় যে,লেবু চাষ কতটা সহজ? এই প্রশ্নের জবাবে অভিষেক বলেন, “লেবু উৎপাদন করা ততটা কঠিন নয় যতটা মানুষ ভাবে। আমাদের শুধু আমাদের পথ বদলাতে হবে। লেবু চাষ খুব একটা চাওয়া হয় না। শক্ত মাটি ছাড়া যেকোনো মাটিতে লেবু চাষ করা যায়। গাছের মধ্যে সমান দূরত্ব, গোবরের কম্পোস্ট সার ব্যবহার, সময়মতো নিড়ানি, কুঁচি, ড্রিপ সেচ কৌশল দিয়ে গাছে সেচ দেওয়া কিছু মৌলিক বিষয়, যেগুলোর যত্ন নিলে লেবু ভালোভাবে চাষ করা যায় এবং লাভও করা যায়।”
এখন পর্যন্ত অভিষেক শতাধিক লোককে লেবু চাষের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। অভিষেকের সাফল্য দেখায় যে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। কঠোর পরিশ্রম এবং দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি থাকলে একজন মানুষ যেকোনো কিছু করতে পারে